নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চা বাগানের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ বিজেপি। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের একের পর এক জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে নিশ্চয়তা পাচ্ছেন চা বাগানের শ্রমিকরা। এই বিষয়টিকেই মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচারে তুলে ধরছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের শাসক দলের দাবি, এর আগে উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র এবং কোচবিহার লোকসভা আসনে জয় এসেছে। এবার মাদারিহাটেও প্রথমবারের জন্য ফুটবে জোড়াফুল।
১৩ নভেম্বর রাজ্যের ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। এই তালিকায় রয়েছে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট কেন্দ্র। ১৯৬২ সালে এই কেন্দ্রে জয়ী হয় আরএসপি। ১৯৬৭ সালে এই আসনের দখল নেয় কংগ্রেস। তারপর ১৯৬৯-২০১১ সাল পর্যন্ত আরএসপির হাতেই ছিল আসনটি। ২০১৬ ও ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন বিজেপির মনোজ টিগ্গা। ফলে এবার এই আসন ছিনিয়ে নেওয়া তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাতে তৃণমূলের যুক্তি, মমতার সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আর তৃণমূলের সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরেই এবার মাদারিহাটে জোড়াফুল ফুটবে।
এবারের লোকসভা ভোটের নিরিখে চা বাগান এলাকার বুথভিত্তিক রিপোর্ট তৃণমূলের জন্য যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। মাদারিহাটে চা বাগান এলাকায় ৭৮টি বুথ। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তার মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে ৩৮টিতে। ৪০টি বুথে এগিয়ে অবশ্য বিরোধীরা। রায়ানপুর চা বাগানের ১৪/৫১ নম্বর বুথে তৃণমূলের ভোট সংগ্রহ ৪৪৭টি। বিরোধী দলের ঝুলিতে গিয়েছে ৩৮১টি ভোট। বন্দপানি চা বাগান এলাকায় বুথ চারটি। তার মধ্যে ১৪/২, ১৪/৩ ও ১৪/৪ নম্বর বুথে তৃণমূল অনেকটাই এগিয়ে। দেখলাপাড়া এবং জয়বীরপাড়া চা বাগানের সব ক’টি বুথেই এগিয়ে রাজ্যের শাসক দল।
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে মাদারিহাটে চা বাগানের অন্তর্গত ৭৮টি বুথের মধ্যে মাত্র ২টিতে তৃণমূল এগিয়ে ছিল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আরও ৩৬টি বুথে এগিয়ে গিয়েছি আমরা, আমরা ওই এলাকায় এগিয়ে আছি মোট ৩৮টিতে বুথে। আসন্ন উপনির্বাচনে মাদারিহাটের ৭৮টি বুথের মধ্যে তৃণমূল বেশিরভাগ বুথেই বিরোধীদের পিছনে ফেলে দেবে।
উপনির্বাচনে মাদারিহাটে তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো বলেন, বন্ধ চা বাগান খোলা এবং শ্রমিকদের উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পূরণ করতে পারেনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কিন্তু তৃণমূলের রাজ্য সরকার চা বাগানে তৈরি করেছে ক্রেশ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চা শ্রমিকদের সর্বতোভাবে পাশে আছেন মমতা। তাই এখানকার মানুষও তৃণমূলের প্রতি সমর্থন প্রতি ভোটেই আরও বেশি করে দিচ্ছেন।
এর আগে, গত বছর সেপ্টেম্বরে উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে জোর ধাক্কা খায় বিজেপি। ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে জিতেছিলেন তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র রায়। বিজেপির কাছে দ্বিতীয় ধাক্কা ছিল লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসনে তাদের পরাজয়। সেখানে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। ভোট-পরবর্তী রিপোর্ট বিজেপির চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। সেখানকার চা বাগান এলাকার বুথগুলিতে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে তৃণমূলের।