নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: দীপাবলির শেষ দিনে ভিড় কার্যত জনসমুদ্র অবস্থা বারাসত ও মধ্যমগ্রামের কালীপুজো মণ্ডপগুলি। ভাইফোঁটার সন্ধ্যায় কার্যত জনসুনামীতে ভাসল কলকাতা শহরতলির এই দুই শহর। ঘামে ভিজে ক্লান্তিহীনভাবে হেঁটে এদিন ভোররাত পর্যন্ত চলল প্যান্ডেল হপিং। রাত ১২ টায় পুলিস মণ্ডপের আলো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তাতেও পাত্তা না দিয়েই মানুষ পায়ে পায়ে পৌঁছালেন একের পর এক প্যান্ডেলে। রবিবার ছুটির দিনে দুই শহর দখল নিল আম জনতা। এদিন বিকাল থেকে নবপল্লি, সন্ধানী ক্লাব, সাউথ ভাটরা পল্লি, পাইওনিয়র, কালিকাপুরের আগুয়ান সঙ্ঘের ৮০ ফুটের প্রতিমা, বিদ্রোহী সহ শহরের ছোট বড় বিভিন্ন পুজো দেখতে বিকেল থেকে ভিড় জমছিল। সন্ধ্যার পর তা কার্যত জনপ্লাবনের রূপ নেয়। রাতে আবার তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। চোখধাঁধানো থিম, রকমারি আলোকসজ্জা, আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই ক’দিন। অন্যান্য জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা ভিড় করে কালীঠাকুর দেখতে এসেছিলেন বারাসত ও মধ্যমগ্রামে। কালীপুজোর শুরু থেকেই সোমবার রাত থেকে বারাসত শহরে ভিড় জমতে শুরু করেছিল। অনেকের দাবি, শেষবেলায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। মণ্ডপের পাশাপাশি শহরের ছোট-বড় রেস্তোরাঁতেও বৃহস্পতিবার তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের মণ্ডপগুলিতে ভিড় হয়েছিল তুলনামূলক বেশি। বিকেল চারটে থেকে বারাসতের ডাকবাংলো মোড় থেকে এদিনও নো এন্ট্রি রেখেছিল পুলিস। অ্যাম্বুলেন্স ও আপৎকালীন কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ছাড়া জাতীয় সড়কের সমস্ত গাড়ি ময়নার দিক দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর ভিড় সামলাতে একপ্রকার হিমশিম খেতে হল ঊর্দিধারীদের।
এদিন সল্টলেক থেকে রাই চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন বারাসতের কালীপুজোর প্যান্ডেল দেখতে। হেঁটে তিনি চাঁপাডালি মোড় থেকে কলোনি মোড়ের দিকে আসছিলেন। মাঝে ব্রিজে বসে চোখে মুখে তিনি ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা নিচ্ছিলেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, আজ শেষবেলা। হাতে সময় কম। তাই দেরি নয়। হাতে থাকা জলের বোতল থেকে একটু ঠাণ্ডা জলে গলাটা ভিজিয়ে নিলেন। বলেন, আবারও একটা বছরের অপেক্ষা। শেষদিনে শহরের ১১ টি প্যান্ডেল দেখা হয়েছে। বাকিগুলো শেষ করতেই হবে। এটাই লক্ষ্য৷ অন্যদিকে আরামবাগ থেকে এসেছিলেন অহনা ঘোষ। সঙ্গে ছিল তাঁর পরিবারের সদস্য। মধ্যমগ্রামের চৌমাথার প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার পর অহনার দাবি, বারাসত আর মধ্যমগ্রামের কমবেশি প্রায় সব প্যান্ডেল দেখা হয়েছে। মনে হচ্ছে দুই শহর যেন গোটা বিশ্বকে তুলে এনেছে। সার্থক হল এবারের কালীপুজো দেখতে আসা। তবে, ভিড়ে মানুষের মধ্যে ছবি তুলতে সমস্যা হয়েছে। করার কি আছে। রবিবার ছিল শেষ দিন। এনিয়ে বারাসতের এসডিপিও অজিঙ্কে বিদ্যাগর অনন্ত বলেন, শেষ দিনে ব্যাপক মানুষের ভিড় হয়। আর তা সামলাতে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। আগেভাগে তা ঘোষণা করা হয়।