• হাসপাতালে ভাইবোন পাতালেন দুই প্রবীণ, উলুধ্বনিতে ভাইফোঁটা
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: ছেলে জোর করে সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছে। বাড়িছাড়া বৃদ্ধ বাবা। এখন বারাসত হাসপাতালে রয়েছেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা মণ্টুলাল বিশ্বাস। পরিবারের অত্যাচারে বাড়িছাড়া বিরাটির কল্যাণী দাসও। ভাইফোঁটার দিন তাঁদের পাশে দাঁড়াল জাতীয় মানবাধিকার ফেডারেশন। ভাইবোন পাতিয়ে ফোঁটা দেওয়ার ব্যবস্থা করল। এই অনুষ্ঠান দেখতে হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর পরিজনরাও ভিড় জমালেন। কেউ উলু দিলেন। অনর্গল হাততালি পড়ল। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা অভিজিৎ বিশ্বাস বললেন, ‘দু’জনকে সকাল থেকেই বিমর্ষ লাগছিল। তাই আমরা ভাই-বোনের সম্পর্ক তৈরি করে দিয়ে ফোঁটা দেওয়ালাম।’ 

    রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে ভাইফোঁটা দিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। চেতলা অগ্রণী ক্লাবে ভাইফোঁটা নিলেন কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নবনীড় বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্কদের কাছ থেকে ফোঁটা নিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তরে নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে অভিনব ফোঁটার আয়োজন হল। বিজেপির পুরুষ নেতারা মহিলা কর্মীদের ফোঁটা দিলেন। জেলায় জেলায় এদিন উৎসাহ নিয়ে ভাইফোঁটা পালন অনুষ্ঠান হয়েছে। কাকদ্বীপের বাসিন্দা সুধাংশু পাইক আর্থিক অনটনের কারণে ছোটবেলায় কোনওদিন বোনের থেকে ভাইফোঁটা পাননি। এখন ৬০ বছরের সুধাংশুবাবু কাকদ্বীপ বাজার এলাকায় চায়ের দোকান চালান। ছোটবেলার দুঃখ ভুলতে ১৩ বছর ধরে তিনি নিজের উদ্যোগে স্থানীয় দুঃস্থ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও অনাথ শিশুদের নিয়ে গণ ভাতৃদ্বিতীয়ার আয়োজন করে থাকেন। বোন নেই এমন প্রায় ২০০ শিশু তাতে যোগ দেয়। শিশুদের সঙ্গে বসে ফোঁটা নেন সুধাংশুও। শিশুদের দেওয়া হয় নতুন জামা। হয় ভূরিভোজ। 

    কাকদ্বীপেই গাছকে এদিন ফোঁটা দেয় ছাত্রীরা। বটতলায় নদী তীরবর্তী এলাকায় থাকা ম্যানগ্রোভ ও বিভিন্ন গাছকে ফোঁটা দিয়েছে তারা। শাঁখ বাজিয়ে পালন হয় উৎসব। সুন্দরবনের কুলতলির গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান বিনতা হালদারের উদ্যোগ গ্রামের মহিলারা নইপুকুরিয়া নদীর চরে ম্যানগ্রোভ গাছকে ভাইফোঁটা দেন। নামখানার হরিপুর গ্রামের সুন্দরিকা নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভকে চন্দনের ফোটা দিয়ে ভাইফোঁটা পালন করেন প্রান্তিক এলাকার গৃহবধূরা। 

    উলুবেড়িয়া পুরসভার মহিলা কাউন্সিলার ও কর্মীরা রাজ্যের পূর্ত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের মন্ত্রী পুলক রায়, পুরসভার চেয়ারম্যান অভয় দাস, ভাইস চেয়ারম্যান সহ প্রশাসনিক কর্তা, সাংবাদিক, মহকুমা শাসকের দপ্তরের আধিকারিক, উপ সংশোধনাগারের বিচারাধীন বন্দি এবং উলুবেড়িয়া থানার পুলিস কর্মীদের ফোঁটা দেন। মিষ্টিমুখ হয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে জয়পুরে পুলিস কর্মীদের পাশাপাশি ২০টি গাছকে ফোঁটা দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বার্তা দেওয়া হয়।

    উত্তরপাড়ার একটি কালীপুজো কমিটির উদ্যেগে গণ ভাইফোঁটার আয়োজন হয়েছিল। বালির মোড় কালীতলা পল্লি উন্নয়ন সমিতির পক্ষ থেকে বোনফোঁটার আয়োজন হয়েছিল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে ফোঁটা দিয়ে বোনফোঁটা শুরু হয়। ১০ জন মহিলাকে ফোঁটা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা চুঁচুড়া পুরসভার কাউন্সিলার ঝণ্টু বিশ্বাস। সমাজকর্মী মৈত্রী দে সিংহ পুরসভার দুই সাফাইকর্মী মনতোষ হরিজন ও শেখ আমজাদকে ভাইফোঁটা দেন। মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে তাঁর ৮১ বছরের দিদি সহ ছ’বোন ভাইফোঁটা দিয়েছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)