আর জি কর মামলা: আজ চার্জ গঠনের দিন ধার্য হতে পারে শিয়ালদহ আদালতে
প্রতিদিন | ০৪ নভেম্বর ২০২৪
অর্ণব আইচ: আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে কীভাবে, কেনই বা আড়াল করেছিলেন টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল? কেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ মদত জুগিয়েছিলেন সঞ্জয়কে? কীসেরই বা ষড়যন্ত্র? সেসবের এখনও কোনও প্রমাণ পেল না সিবিআই। পরিষ্কার হচ্ছে না এসবের ‘মোটিভ’ও। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধেই সিবিআই মূল মামলাটি দায়ের করেছে। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ্য ও প্রমাণ লোপাট, যড়যন্ত্রের অভিযোগে দুই অভিযুক্ত আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়, সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হতে পারে। সঞ্জয়ের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদিনই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের দিন ধার্য করতে পারে আদালত।
সিবিআইয়ের দাবি, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। তাকে আড়াল করা হয়েছে, ষড়যন্ত্রও হয়েছে। এই ব্যাপারে ‘গভীরে গিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে’ বলে দাবি সিবিআইয়ের। এই ব্যাপারে সিবিআইয়ের মূল অভিযোগের আঙুল দুই ধৃত সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের দিকে। কিন্তু সূত্রের খবর, যে অভিযোগগুলি সিবিআই প্রথম থেকে তুলেছে, সেগুলি প্রমাণ করতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদেরই। অথচ নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ বা দ্বিতীয় সপ্তাহেই সন্দীপ ও অভিজিতের বিরুদ্ধে সিবিআইকে চার্জশিট পেশ করতে হবে।
জানা গিয়েছে, জেরার মুখে সিবিআই আধিকারিকদের কাছে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় দাবি করেছিল যে, সন্দীপ ঘোষ আর জি করের অধ্যক্ষ ছিলেন, শুধু এটুকুই সে জানত। সে হাসপাতালের কয়েকটি অনুষ্ঠানে দূর থেকে সন্দীপ ঘোষকে দেখেছে। কিন্তু তার সঙ্গে সন্দীপের কোনও পরিচয় ছিল না। টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের সঙ্গেও তার কখনও কথা বা পরিচয় হয়নি বলে দাবি করেছিল সঞ্জয়। সিবিআইয়ের মতে, ওই অভিযুক্ত মিথ্যা বলতেই পারে। তার দাবি যাচাই করতে সঞ্জয়, সন্দীপ ও অভিজিতের মোবাইল কল, কল রেকর্ড ও হোয়াটস অ্যাপের কলও পরীক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে গত জুলাই মাসের প্রথম থেকে সঞ্জয়ের গতিবিধি জানতে আর জি কর হাসপাতালের প্রত্যেকটি সিসিটিভি পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, গত ৯ আগস্ট ও তার পর সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে অভিজিৎ মণ্ডলের যে ফোনে বহুবার কথা হয়েছে, কিন্তু সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে সন্দীপ বা অভিজিতের কোনও সরাসরি যোগাযোগ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে সঞ্জয় রাইকে সন্দীপ বা অভিজিৎ সরাসরি আড়াল করেছেন, এমন প্রমাণও আসেনি সিবিআইয়ের হাতে।
আবার তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনে সঞ্জয়কে সন্দীপ বা অভিজিৎ প্ররোচনা দিয়েছেন, সেই তথ্যপ্রমাণ করতে গেলে সিবিআইকে প্রমাণ করতে হবে যে, সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে সন্দীপ বা অভিজিতের আগে থেকে যোগাযোগ ছিল। একইভাবে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ দিতে গেলেও এই যোগাযোগের তথ্য সামনে আনতে হবে। একই সঙ্গে নির্যাতিতাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয়কে মদত বা প্ররোচনা এবং ষড়যন্ত্রের ‘মোটিভ’ বা কারণ আদালতকে জানাতে হবে। কী কারণে সঞ্জয়কে ওই দু’জন মিলে এই ঘৃণ্য ও নারকীয় অপরাধ করতে বললেন, সেই তথ্য আদালতকে জানাতে হবে সিবিআইকে। ঘটনার পর কী কারণে ও কেন দুজন সঞ্জয়কে বাঁচানো বা আড়াল করার চেষ্টা করলেন, সেই তথ্যও সামনে আনতে হবে সিবিআইকে। কিন্তু সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁদের যে যোগাযোগ ছিল, এই প্রমাণ না দিতে পারলে কীভাবে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ হয়েছিল, সিবিআই আদালতকে তা জানাতে পারবে না। তবে এগুলির প্রমাণ দিতে না পারলেও তথ্য ও প্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্রের মামলায় অন্য তত্বগুলি সামনে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।