রাজ্যের চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী বলেন, ‘‘আপাত দৃষ্টিতে প্রথমে তনয়াকে গর্ভবতী মনে হয়েছিল। গর্ভবতী হলে যে রকম ভাবে শরীরে বদল আসে, সে রকম বদলই দেখা গিয়েছিল তনয়ার শরীরে। সেই মতো তার দেখাশোনাও করা হয়েছিল। তনয়াকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম আমরা। কিন্তু সম্প্রতি পরীক্ষা করে দেখা যায়, তনয়া গর্ভবতী নয়। হরমোনজনিত কারণে ওকে গর্ভবতী মনে হয়েছিল।’’
সাফারি পার্ক সূত্রে খবর, শিলিগুড়িতে আসার আগে ত্রিপুরার চিড়িয়াখানায় ছিল তনয়া। তার সঙ্গে সিংহ সুরজও ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই তাদের সাফারি পার্কে নিয়ে আসা হয়। তার পরেই তনয়ার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সুরজ ও তনয়া যে হেতু বরাবর একসঙ্গেই থাকত, তাই শারীরিক বদল দেখে তনয়া গর্ভবতী হয়েছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এক কর্তা জানান, ‘সিউডো প্রেগন্যান্সি’র ক্ষেত্রে স্ত্রী-প্রাণীর শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হলে তা জরায়ুতে থাকা কর্পাস লিউটিয়াম নামে এক গ্রন্থিকে সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে শরীরে যে সব পরিবর্তন দেখা যায়, তার সঙ্গে স্ত্রী-প্রাণীর গর্ভধারণের লক্ষণের হুবহু মিল রয়েছে। যেমন বেশি বিশ্রাম নেওয়া, স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া, মাটি খোড়া, খিটখিটে হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে খাবার না-খাওয়া ইত্যাদি ৷ কুকুর, বিড়াল বা এই ধরনের প্রাণীদের ক্ষেত্রে ‘সিউডো প্রেগন্যান্সি’ এক মাসের মতো থাকে। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে এই অবস্থা তিন মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে শরীর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আর তনয়ার ক্ষেত্রে এ সব লক্ষণই ধরা পড়েছিল। যে কারণে তাকে গর্ভবতী বলে মনে করেছিলেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
শিলিগুড়ি সাফারি পার্কের অধিকর্তা বিজয় কুমার বলেন, ‘‘তনয়া গর্ভবতী নয়। সেটা পরিষ্কার। তনয়ার সিউডো প্রেগন্যান্সি হয়েছিল। যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় ছদ্ম গর্ভধারণ। তবে আমরা আশাবাদী, বাঘের মতো সিংহ প্রজননেও আগামী দিনে আমরা সাফল্য পাব।’’
এই গোটা ঘটনায় অবশ্য অন্য গন্ধ পাচ্ছে বন্যপ্রাণ সংগঠনগুলি। বন্যপ্রাণ সংগঠন ‘স্ন্যাপ’-এর কর্নধার কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, ‘‘সিউডো প্রেগন্যান্সি হয়। যা পরবর্তী কালে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই প্রেগন্যান্সি নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল সাফারি পার্কের কর্তাদের। গোটা বিষয়টি নিয়ে কিন্তু একাধিক প্রশ্ন উঠছে। সাফারি পার্কের উচিত, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা।’’
একই কথা বলছেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ড’-এর সদস্য অনিমেষ বসু। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি-বেসরকারি দু’পক্ষের লোককে রেখে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে সবটা তদন্ত করে দেখা উচিত। তা হলেই আসল কারণ বা সব প্রশ্নের সমাধান হবে৷’’