উপনির্বাচনী লড়াইয়ে তিন শিক্ষক বনাম ভূমিকন্যা, কার দখলে যাবে তালড্যাংরা?
প্রতিদিন | ০৫ নভেম্বর ২০২৪
দেবব্রত দাস, খাতড়া: একসময় সিপিএম নেতা অমিয় পাত্রের ‘খাসতালুক’ ছিল বাঁকুড়ার তালড্যাংরা। সময়ের সরণিতে লাল ঝান্ডার দাপট এখন অস্তমিত। লাল এখন ফিকে। ঘাসফুলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিচ্ছে পদ্মফুল। রাজনীতির সমীকরণে একাধিক দলের প্রার্থী থাকলেও ২০২১ সালের মত এবারের বিধানসভা উপনির্বাচনেও তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে মূল লড়াইয়ের সম্ভাবনা প্রবল। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী ১৪ হাজারের বেশি ভোটে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির শ্যামল সরকারকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন বাঁকুড়া সাংঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর ছেড়ে যাওয়া এই কেন্দ্রে এবার তাই উপনির্বাচন হচ্ছে। কেমন হতে চলেছে এবার উপনির্বাচনের লড়াই?
আগামী ১৩ নভেম্বর এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৬৪ হাজার। এবার এই কেন্দ্রে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা চতুর্মুখী হলেও মূল লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তৃণমূল বনাম বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে। তৃণমূল প্রার্থী ফাল্গুনী সিংহবাবু। বিজেপির হয়ে লড়ছেন অনন্যা রায়চক্রবর্তী। সিপিএমের দেবকান্তি মহান্তি ও কংগ্রেসের প্রার্থী তুষারকান্তি সন্নিগ্রহী।
ফাল্গুনী সিংহবাবু (তৃণমূল) ? সিমলাপাল ব্লকের বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের তালদা গ্রামের বাসিন্দা। বছর চুয়াল্লিশের ফাল্গুনীবাবু আগে সিমলাপাল ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি ছিলেন। ২০২২ সালে তাঁকে সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি করা হয়। এখনও তিনি সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। কলেজে ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি ফাল্গুনীবাবুর। প্রথমে কলেজ রাজনীতিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করতেন। তার পর যুব তৃণমূল ও দলের ব্লক সভাপতি। দক্ষ সংগঠক হিসাবে সিমলাপাল ব্লক এলাকায় তরুণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ তিনি। সারেঙ্গার গড়গড়িয়া সুভাষ হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক তিনি। রাজনীতিতে কম বয়স থেকেই বাগ্মী হিসাবে পরিচিত হলেও নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে ময়দানে এবারই প্রথম পা রাখলেন ফাল্গুনীবাবু। জীবনে কোনদিন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদে লড়াই করেননি। প্রথম নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছেন। আর প্রথমবারেই তাঁর একেবারে বিধানসভা উপনির্বাচনে।
অনন্যা রায় চক্রবর্তী (বিজেপি) ? বাঁকুড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একসময় তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন। গত পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে অনন্যা রায় চক্রবর্তী নির্দল প্রার্থী হিসাবে নিজের ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিজের ওয়ার্ড থেকে এবারও তিনি জয়ী হয়েছেন। তবে মাসখানেক আগে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। এবার তালড্যাংরা কেন্দ্রের জন্য বিজেপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী হওয়ার ইঁদুরদৌড়ে ছিলেন। কিন্তু শিকে ছিঁড়েছে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অনন্যার। তালড্যাংরা বিধানসভা এলাকাতেই তাঁর জন্ম। সেই সূত্রে নিজেকে ভূমিকন্যা বলে দাবি করে অনন্যা উপনির্বাচনের লড়াইয়ে নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন।
দেবকান্তি মহান্তি (সিপিএম) ? উপনির্বাচনে । বামপন্থী ঘরানার দেবকান্তিবাবু চাকা নির্মলানন্দ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সিমলাপাল ব্লকের লক্ষ্মীসাগর অঞ্চলের বনকাটা গ্রামের বাসিন্দা। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-এর সিমলাপাল জোনাল কমিটির সম্পাদক। আশৈশব বামপন্থী পরিবারের দেবকান্তিবাবু শিক্ষকতাকে পেশা করলেও নেশা নাটক ও আবৃত্তি চর্চা। রুচিশীল সংস্কৃতিবান শিক্ষক। জীবনে প্রথমবার ভোটের ময়দানে লড়াইয়ে নেমেছেন।
তুষারকান্তি সন্নিগ্রহী (কংগ্রেস) ? বেড়ে ওঠা পুরোপুরি কংগ্রেসি ঘরানায়। দাদু ও বাবা ছিলেন কংগ্রেসের নেতা। শৈশব থেকে তাই জাতীয় কংগ্রেস তাঁর রক্তে। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। দক্ষিনবঙ্গ ব্রাহ্মণ কল্যাণ সমিতির সিমলাপাল ব্লক সভাপতি। কংগ্রেস প্রার্থী তুষারকান্তি সন্নিগ্রহী। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সত্তরোর্ধ্ব তুষারকান্তি সন্নিগ্রহীকেই এবার তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। তবে পেশায় শিক্ষকতার পাশাপাশি এলাকার নানা সামাজিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত তুষারবাবু। এবার সিপিএমের সঙ্গে জোট না হওয়ায় তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। সিমলাপালের বাসিন্দা তুষারবাবু ছাত্রজীবন থেকেই কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেন তিনি। একইসঙ্গে নিজের উৎকল সম্প্রদায়ের জন্য সংগঠন গড়ে তুলে বিভিন্ন দাবিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হলেও এবারের নির্বাচনে সেই জোট হয়নি। তাই সিপিএম ও কংগ্রেস আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারও ভোটে মূল লড়াই হবে সরাসরি তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানের জন্য লড়াই হবে সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে। শাসকদলের নেতৃত্ব জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। ফাল্গুনী সিংহবাবু রেকর্ড ভোটে জয়ী হবেন বলে তৃণমূল জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি। যদিও বিরোধী দলের প্রার্থীদের দাবি, ভোটের সমীকরণ এবার মিলতে নাও পারে।