নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: জল ছাড়ছে না ডিভিসি। শুকিয়ে গিয়েছে দামোদর। তীব্র জল সঙ্কটে আসানসোল। ইস্কোর চ্যানেলেও ঢুকছে না জল। কারখানা চালাতে হিমশিম কর্তৃপক্ষ। টাউনশিপ এলাকা সহ আসানসোল পুরসভার বহু এলাকা নির্জলা। নদীতে জল নেই বলে কালাঝরিয়া, ডিহিকা জল প্রকল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের একাধিক জল প্রকল্পও। উৎসবের মরশুম জল পাচ্ছেন না হাজার হাজার মানুষ। এলাকায় বাড়ছে ক্ষোভ। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইস্কোর পাশাপাশি জেলাশাসকের মাধ্যমে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে জল ছাড়ার অনুরোধ করেছে আসানসোল পুর কমিশনার রাজু মিশ্র। সোমবার তিনি বলেন, ‘নদীতে পর্যাপ্ত জল না থাকার জেরে জল প্রকল্পগুলিতে প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করতে সমস্যা হচ্ছে। ইস্কো কর্তৃপক্ষ আপৎকালীন ভাবে আমাদের কাছে ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করতে অনুরোধ করেছে। জেলাশাসকের মাধ্যমে আমরা ডিভিসিকে জল ছাড়তে অনুরোধ করেছি।’ ইস্কোর জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, ‘চ্যানেলে পর্যপ্ত নদীর জল আসছে না। এরফলে জলসংকট দেখা দিয়েছে। আমরা চ্যানেলটিও সংস্কার করছি।’
দামোদর নদের অদূরে বার্নপুরে রয়েছে দেশের অন্যতম বড় ইস্পাত কারখানা ইস্কো। তাদের বড় টাউনশিপ এলাকাও রয়েছে। কারখানা চালাতে ও টাউনশিপে জল সরবরাহ করতে ইস্কোর পৃথক জল প্রকল্প রয়েছে। মূলত দামোদর নদ থেকে একটি ফিডার ক্যানেল গিয়েছে কারখানা অভিমুখে। যেখান থেকে পরিস্রুত জল বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়। যাকে ইস্কোর চ্যানেলও বলে। দামোদরে জল একবারে না থাকার জেরে সেখানে জল ঢুকছেই না। তার জেরে ছটের আগে নির্জলা বার্নপুর। এই অবস্থায় ইস্কোর পক্ষ থেকে আসানসোল পুরসভাকে ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করতে অনুরোধ করেছে ইস্কো কর্তৃপক্ষ। আসানসোল পুরসভার বার্নপুর বরোর চেয়ারম্যান শিবানন্দ বাউরি বলেন, ‘বাঁকুড়া দিক থেকে বালি তোলার জেরে দামোদরের গতি বাঁকুড়া অভিমুখে হয়ে গিয়েছে। আমাদের জল প্রকল্পগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। বার্নপুর এলাকায় পুলিস-প্রশাসনের বহু কর্তাদের বাংলো। সেই সব এলাকাতেও এদিন পাইপের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁদেরও ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে জল কিনতে হয়।’
আসানসোল পুরসভার কালাঝরিয়া ও ডিহিকা জল প্রকল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পুরসভার জল বিভাগ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রায় পাঁচদিন ধরে পানীয় জল দেওয়ার মতো জলটুকু ছাড়া হচ্ছে না মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে। প্রথম দিকে মজুত থাকা জলে কোনওরকমে কাজকর্ম করছিলেন বাসিন্দারা। রবিবার থেকে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল আকার নেয়। জামুড়িয়ায় জল সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর। সেখানেও দামোদরে জলের অভাবে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে ডিভিসির সূত্রে জানানো হয়েছে, ইস্কোর আর্জি তাঁদের কাছে এসেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ও মঙ্গলবার মাইথন থেকে দিনে এক হাজার ফুট ও পাঞ্চেত থেকে সারাদিনে মাত্র ২ হাজার ফুট জল ছাড়া হচ্ছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে মোট ৭০০ একর ফুট জল ছাড়া হবে শুধু মাত্র পানীয় জলের জন্য।
কালীপুজো মিটতেই জল ছাড়া নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে দড়ি টানাটানি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত অভিযোগ ছিল ডিভিসি মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে অতিরিক্ত জল ছেড়ে দেওয়ার জন্যই বন্যা হচ্ছে। এখন জল ছাড়া এমন ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাতে পানীয় জলের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।