• বিসর্জনের পর ৩দিন অতিক্রান্ত, এখনও কাঠামো ভাসছে গঙ্গায়
    বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: বছরের পর বছর দেখা যাচ্ছে রোগের একই লক্ষণ। দুর্গাপুজো হোক বা কালীপুজো, নিরঞ্জনের পরেও দিনের পর দিন প্রতিমার কাঠামো ভাসতেই থাকে গঙ্গাতে। রাজ্যে গঙ্গার তটরেখা বরাবর বিভিন্ন শহর অথবা মফস্‌সল এলাকাগুলিতে গঙ্গাদূষণের এহেন চিত্র আকছার দেখা যায়। শান্তিপুর সেই তালিকায় অন্যতম। হিসেব বলছে, শান্তিপুরের অধিকাংশ প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে শুক্রবার। তারপর তিনদিন অতিক্রান্ত। কিন্তু গঙ্গার একাধিক ঘাটে এখনও ভাসছে প্রতিমার কাঠামো। দুর্গাপুজো পরবর্তীতে ঠিক যে ছবি দেখা গিয়েছিল, কালীপুজোর পরেও ফের একই ছবি ফিরে এল ঘাটগুলিতে।

    কেন্দ্র বা রাজ্য উভয় সরকারের কাছেই গঙ্গাদূষণ অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। তাছাড়া গঙ্গায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে কড়া নির্দেশ রয়েছে পরিবেশ আদালতেরও। কিন্তু তাতেও খুব একটা হেলদোল চোখে পড়ে না অনেক জায়গায়। প্রতিমা নিরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গেই যে কাঠামো তুলে ফেলার কথা, তা  নিরঞ্জনের ৭২ ঘণ্টা পরেও বহাল তবিয়তে ভাসছে। সমাজ ও পরিবেশ মানুষদের বয়ানে, স্থানীয় প্রশাসনের এই ধরনের হেলদোলহীন অবস্থান কেবল অসচেতনতাই নয়, এক প্রকার ‘অপরাধ’ বলেই গণ্য হওয়া উচিত। দেখা যায়, গঙ্গার সংলগ্ন বঙ্গের বহু শহরেই প্রতিমার কাঠামো গঙ্গা থেকে সময়ে তোলা হয় না। দিনের পর দিন সেগুলি গঙ্গার জলেই ভাসে। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাবে নদীর জলে বাড়ে দূষণের মাত্রা। সোমবার বিকেলের ছবি বলছে, শহরের বিভিন্ন গঙ্গার ঘাট পর্যবেক্ষণ করে এহেন অসচেতনতার প্রমাণ মিলেছে।

    শান্তিপুরের মোটামুটি তিন-চারটি ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। দুর্গাপুজোর পাশাপাশি বেশ জৌলুসের সঙ্গেই এখানে কালীর আরাধনা হয়। ফলে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জনের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এর মধ্যে যেমন রয়েছে বাড়ির ঠাকুর, তেমনই রয়েছে ডজন খানেক বারোয়ারি পূজো। বিসর্জনের ঘাটগুলির মধ্যেই উল্লেখযোগ্য, মতিগঞ্জ ঘাট, বড়বাজার ঘাট এবং কৃষ্ণকালীতলা ঘাট। এদিনের ছবি বলছে, তিনটি ঘাটেই বহু প্রতিমার কাঠামো এখনও পড়ে রয়েছে সেই শুক্রবার থেকে। ঘাটের অনতিদূরে অথবা সংলগ্ন জলে ভাসছে সেগুলি। এর মধ্যে সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি মতিগঞ্জ ঘাটে। একাধিক প্রতিমার কাঠামোর পাশাপাশি ফুল, বেলপাতার মতো পচনশীল বস্তুগুলিও জলে পড়ে দূষণ ছড়াচ্ছে। 

    শান্তিপুরের পরিবেশপ্রেমীদের একাংশের দাবি, এটা নতুন নয়। যে কোনও পুজোর বিসর্জনের পর বহুদিন কাঠামো জলে পড়ে থাকে। তারপর পুরসভার হুঁশ ফেরে। অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ পুরসভা। তাদের দাবি, যথেষ্ট সক্রিয়তার সঙ্গে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর গঙ্গা থেকে কাঠামো তুলে ফেলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরে অনেকে ভাসান দেয়, সেই রকম হাতেগোনা কয়েকটি কাঠামো পড়ে থাকে। পুরসভার এক কর্তা বলেন, শুক্রবার আমাদের পুরসভার নির্দিষ্ট টিম কাজ করেছে। বহু কাঠামো তুলে পাশে রাখা আছে। কিছু হয়তো রয়েছে। আমরা দ্রুত তা সরিয়ে ফেলব। পুরসভা গঙ্গাদূষণ রোধে যথেষ্ট সক্রিয়।
  • Link to this news (বর্তমান)