• ‘উপহার’ না কিনলে সার নয়, বিপাকে আলুচাষিরা
    বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সোমবার মেমারির সাতগেছিয়ার এক চাষি শ্রীধরপুর এলাকা থেকে ১২ বস্তা ১০:২৬:২৬ সার কেনেন। মোট দাম নেওয়া হয় ১৭হাজার ৬৪০টাকা। বিক্রেতা তাঁকে জানায় ওই সার নিতে হলে ‘উপহার’ নিতে হবে। তা না হলে সার দেওয়া যাবে না। বাধ্য হয়ে তিনি বিক্রেতার শর্ত মানতে রাজি হন। তাঁকে ৩৯৬০ টাকার ‘উপহার’ নিতে হয়। চাষিরা বলেন, সেটা একরকম অনুখাদ্য। চাষের জন্য তা খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। সেকারণে চাষিরা তা কিনতে চান না। কিন্তু সার বিক্রেতারা তা নিতে তাদের বাধ্য করায় চাষিরা বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এখন সারের দাম আকাশছোঁয়া। চাষের অন্যান্য খরচও বেড়ে গিয়েছে। ধার করে সার কিনতে হচ্ছে। তারপর ট্যাগ বা উপহার খরচ করে কিনতে হওয়ায় চাষিদের নাভিশ্বাস উঠছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। 

    চাষি জয়দেব ভট্টাচার্য বলেন, ইচ্ছে না থাকলেও সারের সঙ্গে অন্য কিছু কিনতে হচ্ছে। প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত। আর এক কৃষক বলেন, আলু চাষ শুরু হতে এখনও কিছুদিন বাকি রয়েছে। এখনও জমি থেকে ধান ওঠেনি। এখন থেকেই সারের সঙ্গে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। ভরা মরশুমে কী হবে তা ঠাওর করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ১০:২৬:২৬ সার দিয়েই আলু চাষ করে আসছি। অন্য সার ব্যবহার করার অভ্যাস নেই। তাই বাধ্য হয়েই সার কিনতে হচ্ছে। কৃষিদপ্তরের অবশ্য দাবি, সারের কালোবাজারি কোথাও হচ্ছে না। লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে। আগামী দিনেও প্রতিটি ব্লকের দোকান এবং সমবায় সমিতিগুলিতে নজরদারি চালানো হবে। সারের সঙ্গে কোনও চাষি ট্যাগ নিতে বাধ্য নয়। তাঁরা যতটা চাইবেন ততটা সার দিতে হবে। 

    কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, আলু চাষে ১০:২৬:২৬ সার অপরিহার্য নয়। বিকল্প সার রয়েছে। কৃষিদপ্তর তা নিয়ে প্রচার করে। কোন সার কত পরিমাণ দিলে তা ১০:২৬:২৬ এর বিকল্প হতে পারে তা বুঝিয়ে বলা হয়। তারপরও চাষিরা ওই একটি সারের উপর ভরসা করেন। সেকারণে কেউ কেউ ফায়দা তোলার চেষ্টা করে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল বলেন, দোকানগুলিতে লাগাতার অভিযান চালানো হবে। কোনও চাষি নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সার বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, ট্যাগ ছাড়া এমআরপিতে ১০:২৬:২৬ সার বিক্রি করলে লাভ পাওয়া যায় না। পরিবহণ খরচ রয়েছে। সেই কারণেই অনেকেই ট্যাগ ছাড়া সার বিক্রি করতে চায় না। অনুখাদ্য বিক্রি করলে কিছুটা লাভ পাওয়া যায়। কৃষিদপ্তরের অবশ্য দাবি, শর্ত মেনেই ‘ডিলারশিপ’ দেওয়া হয়। তাই কোনও অজুহাতে চাষিদের আর্থিক ধাক্কা দেওয়া যাবে না। 
  • Link to this news (বর্তমান)