‘তোমরা হেলমেট পরো’, বাইক চালকদের বার্তা পথ দুর্ঘটনায় সন্তান হারানো বাবাদের
বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: নাদনঘাটের শ্রীরামপুর মোড়ে কাঁপা হাতে মাইক্রোফোন ধরলেন আনোয়ার মোল্লা। চোখে থেকে বারবার জল গড়িয়ে আসছে। ঠিক করে কথা বলতে পারছিলেন না। অনেক চেষ্টার পর কান্না জড়ানো গলায় বাইক আরোহীদের উদ্দেশে বললেন, বাবা তোমরা হেলমেট ছাড়া গাড়ি চালিও না। আমার ছেলে চলে গিয়েছে। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কী, তা বুঝেছি। এই ব্যথা যেন আর কাউকে বইতে না হয়। তারপর মাইক ধরলেন জাকাতউল্লা মণ্ডল। অল্পবয়সিদের উদ্দেশে তাঁরা মিনতি, বাবা-মা তোমাদের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকে। হেলমেট ছাড়া বাইকে উঠো না। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখো। আমার ছেলের মতো যেন অন্য কারও পরিণতি না হয়। একই আহ্বান কওসর মণ্ডল এবং হিরো শেখের। চারজনই কয়েকদিন আগে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় ছেলেদের হারিয়েছেন। চোখের জল এখনও শুকোয়নি। তার আগেই তাঁরা সচেতন করতে প্রচারে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, অল্পবয়সিরা সকলেই তাঁদের পুত্রতুল্য। অল্পবয়সে সকলেই ভুল করে। হেলমেট ছাড়া বাইক চালায়। তাদের পরিণতি চার ছেলের মতো না হয় তারজন্য হাতজোড় করে পথে নেমেছেন। তাঁদের সঙ্গী ছিলেন রাজ্যের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনিও যুবক-যুবতীদের বাঁচাতে মাইক ধরলেন। মন্ত্রী বলেন, ফ্যাশনের চেয়ে জীবন বড়। হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো কোনও ফ্যাশন হতে পারে না। আমাদের এলাকার চার যুবক কয়েক দিন আগেই প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের কারও বাবা চায়ের দোকান চালান আবার কেউ পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। অনেক লড়াই করে তাঁরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠা করছিলেন। একটি দুর্ঘটনা তাঁদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। আনোয়ার মোল্লা বলেন, ছেলে পুলিসের চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। চাকরি পেলে আমাদের আর কষ্টে থাকত না। একটা দুর্ঘটনা সব ওলটপালট করে দিল।
রাস্তাজুড়ে ছিল রক্তের ছাপ। সে দৃশ্য দেখে এলাকার বাসিন্দারা আঁতকে উঠেছিলেন। শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ে মৃতদের পরিবার। অনোয়ার, জকাতউল্লা মণ্ডলরাও পুত্রশোকে পাথর হয়ে যান। কয়েকদিন পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে তাঁরা অন্য ছেলে মেয়েদের বাঁচাতে পথে নামলেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর সঙ্গে ওই চার পিতা নাদনঘাটের সাতটি এলাকায় পথ সচেতনতামূলক প্রচার করেন। বুকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা রয়েছে। এখনও তাঁরা ছেলের মুখ স্বপ্নে দেখে রাতে ধরফড়িয়ে ওঠেন। এমন বেদনা আর কোনও পিতাকে যেন বয়ে বেরতে না হয় তারজন্য তাঁরা মাইক ধরেছেন। জড়ানো গলায় হেলমেট ছাড়া কাউকে দেখলেই বলছেন, আর আমি কোনও ছেলে হারাতে দেব না। তোমরা বাবা-মায়ের মুখ চেয়ে হেলমেট পরো। নিজস্ব চিত্র