ফ্ল্যাট বুকিংয়ে ১০ শতাংশ, বাতিলেও, প্রোমোটারের তুঘলকি রুখতে বিধির সংশোধনী আনছে রাজ্য
বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৪
প্রীতেশ বসু, কলকাতা: ফ্ল্যাট বুকিংয়ের সময় কত টাকা? আর যদি ক্যানসেল করতে হয়, তাহলেই বা কত টাকা মাশুল গুনতে হবে? রিয়েল এস্টেটে টাকা ঢালার আগে এই দুটোই মধ্যবিত্তের প্রধান প্রশ্ন। সারা জীবনের সঞ্চয় কিংবা পাহাড়প্রমাণ লোন—এভাবেই তিলে তিলে মধ্যবিত্ত গড়ে তোলে স্বপ্নের বাড়ি। কিন্তু কিছু অসাধু প্রোমোটারের জালে আটকে আচমকা ভেঙে পড়ে সেই স্বপ্নের ভিত। কখনও ফ্ল্যাট বুকিংয়ের সময়ই তাঁদের থেকে বড়সড় একটা অঙ্ক চাওয়া হয়। আবার যদি পরিস্থিতির গেরোয় ফ্ল্যাটের বুকিং বাতিল করতে হয়, তার জন্যও গুনতে হয় মোটা টাকা ‘জরিমানা’। বুকিং অ্যামাউন্ট তো পাওয়া যায়ই না, অনেক ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দাবি করে বসে প্রোমোটারদের একাংশ। সাধারণ মানুষের এই ‘দুর্ভোগ’ই এবার রেরা বিধি সংশোধন করে বন্ধ করার পথে রাজ্য সরকার। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটের বুকিং এবং ক্যানসেলেশন মোট দামের ১০ শতাংশেই বেঁধে ফেলতে চলেছে নবান্ন। সেই কারণেই সংশোধনী আসছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বা রেরা’র বিধিতে।
বর্তমানে রেরা’র ১৮ নম্বর রুলে ৪৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরানোর কথা বলা আছে। আম জনতার স্বার্থে সংশোধিত রুলে বিষয়টি আরও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে সাফ বলা থাকছে, ফ্ল্যাটের মোট দামের ১০ শতাংশ হবে সর্বোচ্চ ‘বুকিং অ্যামাউন্ট’ বা অ্যাডভান্স। তার ভিত্তিতে ক্রেতার সঙ্গে প্রাথমিক এগ্রিমেন্ট বা চুক্তি হবে নির্মাতার। এবং ক্রেতা যদি যুক্তিযুক্ত কারণে ফ্ল্যাটের বুকিং বাতিল করেন, তাহলেও শুধুমাত্র ওই ১০ শতাংশ টাকা কেটে পুরো অর্থই ফেরত দিতে হবে ডেভেলপারকে। সংশোধিত রুলে পরিষ্কার বলা থাকবে যে, বুকিং অ্যামাউন্টের (যা সর্বোচ্চ হবে মোট দামের ১০ শতাংশ) থেকে এক টাকারও বেশি ক্রেতার ‘ফরফিট’ হবে না, বা প্রোমোটার কাটতে পারবেন না। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বর্তমানে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে অধিকাংশ অভিযোগই হল ফ্ল্যাট কেনা-বেচা সংক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে প্রোমোটারদের তুঘলকি রুখতেই বিধি সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতাকে ফ্ল্যাট দিতে না পারলে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বাজার চলতি বেঞ্চমার্ক প্রাইম লেন্ডিং রেটের (যে সুদের হারের উপর ভিত্তি করে ঋণ দেয় ব্যাঙ্ক) সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে যে সুদের হার দাঁড়ায়, ফ্ল্যাটের দামের উপর সেই হারে ক্রেতাকে পেনাল্টি দিতে হয় প্রোমোটারকে। যেমন, এই মুহূর্তে স্টেট ব্যাঙ্কের বিপিএলআর হল ১৫.১৫ শতাংশ। সেক্ষেত্রে ১৭.১৫ শতাংশ হারে ‘জরিমানা’ গুনতে হবে। ক্রেতা বকেয়া অর্থ মেটাতে না পারলে তাঁকেও একই নিয়ম মানতে হবে। এই নিয়মও আরও ভালোভাবে স্পষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে সংশোধিত আইনে। কিন্তু পর পর কতগুলি মাসের কিস্তি বকেয়া পড়লে ক্রেতাকে ডিফল্টার হিসেবে ধরা হবে, কিংবা তাঁর বাড়ি কেনার চুক্তি বাতিল হবে? সূত্রের খবর, তার নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া থাকছে প্রস্তাবিত রুলে। জানা যাচ্ছে, প্রোমোটার বকেয়া মেটানোর নোটিস ধরাবেন ক্রেতাকে। তারপরও যদি তিন মাস পর্যন্ত ক্রেতা টাকা না দেন, ফ্ল্যাটের চুক্তি বাতিল করতে পারবেন প্রোমোটার। তবে সেই ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশ বুকিং অ্যামাউন্ট ছাড়া ফ্ল্যাট কেনার জন্য ক্রেতা যত টাকা দিয়েছেন, তার পুরোটা ফেরত দিয়ে তবেই চুক্তি খারিজ করতে পারবেন প্রোমোটার। সেটাও ৪৫ দিনের মধ্যে।
এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সংশোধিত এই রুলের খসড়া আইন জমা দিয়েছে আবাসন দপ্তর। সম্প্রতি এই সংশোধনী সম্পর্কে বেশ কিছু ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে আইন দপ্তরের তরফে। যার উত্তরও ইতিমধ্যে আবাসন দপ্তর পাঠিয়ে দিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। ফলে শীঘ্রই বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল আসতে চলেছে বলেই সূত্রের খবর।