নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের লাগামহীন দুর্নীতি নাকি উগ্র হিন্দুত্ব—আসন্ন উপনির্বাচনে প্রচারের অভিমুখ নিয়ে ধন্দ বঙ্গ বিজেপিতে। ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। প্রার্থী ঘোষণার প্রতিযোগিতায় সব দলকে পিছনে ফেলে সর্বপ্রথম নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। কিন্তু প্রচারে তেমন একটা সাড়া মিলছে না বলে দলীয় সূত্রের দাবি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, সারদা-নারদা-শিক্ষক-স্বাস্থ্যসহ লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে রাজ্যের তাবড় নেতারা আক্রমণ শানিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিধানসভা, লোকসভা, পুরসভাসহ একের পর এক ভোটে জিতে চলেছে তৃণমূল। কারণ, হিসেবে ব্লক সংখ্যালঘু ভোট এবং লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সামাজিক প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের সমর্থনের কথা উঠে আসছে। এর পাল্টা হিসেবে তেমন কোনও গ্রহণযোগ্য প্রকল্প কিংবা ঘোষণা করতে পারছে না গেরুয়া পার্টি।
তাই এবার হিন্দু ভোটকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটে নামার কৌশলের কথা উঠে আসছে দলের অপর লবির শীর্ষ নেতাদের তরফে। তাঁদের দাবি, রাজ্যের ৭০ শতাংশ সংখ্যাগুরু মানুষের সমর্থন পেতে হিন্দুত্বকে সামনে রেখেই এগতে হবে। তার জন্য বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গাপুজো কিংবা কালীপুজো মণ্ডপে আক্রমণের ঘটনা সামনে এনে বিশেষ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও রাজ্য বিজেপির ‘নরমপন্থী’রা এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁদের যুক্তি, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফল থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে না দলের একাংশ। পুরো কাজ শেষ না করেই ২০২৪’কে মাথায় রেখে তড়িঘড়ি রামমন্দিদের উদ্বোধন হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে দেশের বাছাই করা নেতারা ভোটপ্রচারে উগ্র হিন্দুত্বের লাগাতার প্রচার করেছেন। কিন্তু ফল প্রকাশ হতে দেখা গিয়েছে বিজেপি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ২৪০টি আসনে আটকে গিয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪—তিনবারের মধ্যে সবচেয়ে কম আসন এসেছে এবারের ভোটে। এই কারণে শরিকদের মুখাপেক্ষী হয়ে সরকার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, ওয়াকফ বিল সিলক্টে কমিটিতে ঝুলে রয়েছে। এনিয়ে কংগ্রেসসহ সমগ্র বিরোধীরা লাগাতার প্রচার করছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি গলার কাঁটা হিসেবে আটকে রয়েছে। স্বভাবতই সার্বিকভাবে হিন্দুত্ব বর্তমান পরিস্থিতিতে পার্টিকে ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না। তাই এই উপনির্বাচনে তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়েই বেশি সময় ব্যয় করার পক্ষে সংশ্লিষ্ট মহল। যদিও অপর পক্ষ নিজেদের এজেন্ডায় অনড়। এতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের প্রচারের অভিমুখ নির্ধারণে চরম অভ্যন্তরীণ সংঘাত তৈরি করেছে।