• ‘ছেলেধরা’র পর এবার ‘দানব’, গুজব গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যা নামলেই বাড়ছে ভয়
    বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: কয়েকমাস আগে ‘ছেলেধরা’ গুজবে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল বারাসত, বনগাঁর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। স্রেফ গুজবের বশবর্তী হয়ে একাধিক জায়গায় ঘটেছিল গণপিটুনির মতো ঘটনা। সেসব ঘটনার স্মৃতি  এখনও টাটকা। তার মধ্যেই বারাসত শহর লাগোয়া গ্রামাঞ্চলে নতুন করে এক গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। এবারের বিষয় ‘দানব’! ভূতের চেহারা যেভাবে মানুষ কল্পনা করে, অনেকটা সেভাবেই শাড়ি পরিহিত একটি আবছা ছায়ামূর্তি হেঁটে যাচ্ছে। দূর থেকে ভেসে আসা কান্নার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে ঘুঙুরের শব্দ। এরকম একটি ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে। তারপরই বারাসত শহর লাগোয়া কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের উলা, বয়রা, কালসারা, কাঁঠালিয়া, জাগুলি ইত্যাদি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে ‘দানব’ গুজব। ইতিমধ্যে এসব অঞ্চলে গুজবের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিকেল ৫ টার পর গৃহবন্দি হয়ে পড়ছে মানুষ। অত্যন্ত জরুরি কোনও প্রয়োজন ছাড়া রাতবিরেতে কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। আট থেকে আশি, সবার মধ্যেই ভালোরকম ভয় ধরিয়ে দিয়েছে ‘দানব’। কদম্বগাছির গ্রামগুলিতে বিঘার পর বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে আমবাগান। জমির পাশে রয়েছে বাঁশবন। গান। এই আবহের সঙ্গে গুজব যুক্ত হওয়ায় সন্ধ্যা নামলেই অজানা আতঙ্ক ঘিরে ধরছে গ্রামবাসীদের। ভাইরাল ভিডিওটি ওই এলাকার বলে কেউ বা কারা রটিয়ে দেওয়ার পরেই ‘দানব’ গুজব জোরদার হয়ে ওঠে। 

    তবে অনেকেই এই ‘গাঁজাখুরি’ মানতে রাজি নন। স্থানীয় বাসিন্দা অদুত আলি, মির্তাজুলরা বলেন, ‘সপ্তাহখানেক ধরে এটাই যেন একমাত্র আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যি না মিথ্যা, কেউ জানে না। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই সবাই ভয়ে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে।’ কাঁঠালিয়ার বাসিন্দা শেখ সেকেন্দার বলেন, ‘একটি ভিডিও আমার কাছেও রয়েছে। সেখানে এক মহিলার ছায়মূর্তির সঙ্গে এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ওই লোকটিকে নাকি দানব আক্রমণ করেছে। তবে এসব আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। কোথায় এটা হয়েছে, তাও কারও কাছে পরিষ্কার নয়।’ নিমাই ঘোষ নামে আরেক গ্রামবাসী বলেন, ‘পুরোটাই গুজব। এখন তো ফোনেই সবকিছু দেওয়া-নেওয়া হয়। সেখান থেকে এই গুজব রটেছে। আবার কেউ কোনও কারসাজি করছে কি না, কে জানে।’ ইরফান আলি মোল্লা নামে এক স্কুলপড়ুয়া বলে, ‘আমিও ভিডিও টা দেখেছি। খুব ভয় হচ্ছে। বাড়ির লোকজন সন্ধ্যার পর বেরতে বারণ করেছে।’ 

    এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করে অন্যপথে চালিত করতেই এসব রটানো হচ্ছে। শুধু বারাসত বলে নয়, বনগাঁতেও এই গুজব রটেছে। কেউ যদি নির্দিষ্ট জায়গা ও আক্রান্তের খোঁজ দিতে পারেন, তাঁকে আমরা পুরস্কৃত করব। আমরা এনিয়ে সচেতনতা প্রচার শুরু করে দিয়েছি।’ নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)