নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: জগদ্ধাত্রী পুজোর আর বাকি দু’দিন। সাত নভেম্বর পুজো শুরু। ইতিমধ্যেই পুজোকে কেন্দ্র করে নব সাজে সেজেছে গঙ্গাপাড়ের জনপদ চন্দননগর। বাংলায় এক ঐতিহাসিক ক্ষণে শুরু হয়েছিল জগদ্ধাত্রীর আরাধনা। চন্দননগর না কৃষ্ণনগর, কোথায় পুজো শুরু হয় তা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। সময়ের হাত ধরে চন্দননগরের বহু পুজোর বয়স শতাব্দী পার করেছে। কোনও পুজো অর্ধশতাব্দী ধরে চলছে। চন্দননগরের কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির তত্ত্বাবধানে থাকা পাঁচটি পুজোর ৫০ বছরে পা। দু’টির বয়স ৭৫বছর। একটি ২৫ বছরের।
সোমবার কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির তরফে এবারের পুজোর বিশেষ দিকগুলি উল্লেখ করে পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিখ্যাত পুজোর ততোধিক বিখ্যাত শোভাযাত্রাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বিশেষ পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘মোট ১৭৭টি পুজোর আয়োজন হচ্ছে। শোভাযাত্রা হবে ১১ নভেম্বর। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া পুজোর সংখ্যা গতবারের থেকে কিছু বেড়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজো বিশ্বজুড়ে প্রচার পেয়েছে। দেশবিদেশের মানুষ শোভাযাত্রা দেখতে মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু অনেকেই আসতে পারেন না। তাঁদের আমরা সামজিক মাধ্যম দিয়ে যুক্ত করে শোভাযাত্রা দেখার ব্যবস্থা করব।’ কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁতিরবাগান চার ঠাকুরতলা, গঞ্জ শীতলাতলা, বাগবাজার বাবু পুকুরধার, নতুনপাড়া এবং ভদ্রেশ্বরের ১৫ পল্লি পুজো কমিটি এবার ৫০ বছরে পা রেখেছে। ৭৫ বছরের পুজো হবে বাগবাজার চৌমাথা ও বেশোহাটাতে আর ভদ্রেশ্বরের নবগ্রাম পুরশ্রীর পুজো ২৫ বছরে পা দিয়েছে।
সদ্য পেরিয়েছে বাঙালির পুজো মরশুম। কিন্তু চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরবাসীর জন্য মরশুম আরও লম্বা। কারণ জগদ্ধাত্রী পুজো। ছোট দুই শহর ইতিধ্যেই সুদৃশ্য তোরণে ঢাকা পড়েছে। বিভিন্ন মণ্ডপ সুসজ্জিত হয়ে উঠছে। জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তাঁর বিরল রূপ ও বিরাট আকার নিয়ে সেজে উঠছেন। তেমনই পুজো মরশুমে উস্কে যাচ্ছে ইতিহাস, বিতর্ক। চন্দননগর না কৃষ্ণনগর, কোথায় শুরু হয়েছিল জগদ্ধাত্রী পুজো? কৃষ্ণনগরের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম। আর চন্দননগরের পুজো শুরু হয়েছিল সাবেক ফরাসি সরকারের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর হাত ধরে। তিনি ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পুজোর উৎপত্তি নিয়ে যেমন জনশ্রুতি আছে তেমনই পুজোর পদ্ধতি ঘিরে আছে চর্চার রসদ। জগদ্ধাত্রী পুজোতে নবমীর দিন মূল পুজো হয়। ওই দিন সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো একসঙ্গে সারা হয়। একটি বিশেষ তিথি ধরে নবমী পুজো হয়। আশ্চর্য এই যে, পণ্ডিতরা বলেন, সেই তিথিতেই এই পৃথিবীতে ত্রেতাযুগের সূত্রপাত হয়েছিল।