দৃশ্য-১, বেলিয়াঘাটা এলাকা থেকে আইএসএফ প্রার্থীর প্রচার শুরু হবে। প্রার্থী তখনও এসে পৌঁছননি। সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতারাও দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এক পক্বকেশ সিপিএম নেতা অপরজনের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন: কত বুথে এজেন্ট বসানো যাবে? সমর্থকরা ভোট দিতে যাবেন তো?
দৃশ্য-২, দুপুর ১২টাতেও তালাবন্ধ হাড়োয়া লক্ষ্মীবাজার এলাকায় বিজেপি কার্যালয়। অদূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকজন বিজেপি কর্মী। ভোটের হাওয়া নিয়ে প্রশ্নে বলেন, দাদা প্রার্থী নিয়ে উষ্মা আছেই। তার থেকেও বড় কথা প্রচারের টাকা কই? অন্যান্য ভোটে তাও আসত। এবার তো আমাদের কাছে এখনও কিছু আসেনি।
নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলে শাসককে নাস্তানাবুদ করে দেওয়ার চিত্রই চিরকাল দেখে এসেছে হাড়োয়াবাসী। কিন্তু এমন ম্রিয়মাণ ভোট কোনোদিন দেখেছেন কি না মনে করতে পারছেন না বহু বাসিন্দা। রাস্তাঘাটে ভোটের প্রচার, বিরোধী রাজনৈতিক দলের পতাকা কার্যত দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে। নিজেদের শক্তগড়ে ছন্নছাড়া বিরোধীদের পদর্যুস্ত করার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শাসক শিবির। প্রার্থী নিয়ে শাসক দলের মধ্যে মান-অভিমান থাকলেও আত্মবিশ্বাসী ভোট ম্যানেজারদের দাবি, রাজ্যের ছ’টি আসনের উপনির্বাচনে সর্বোচ্চ লিড আসবে হাড়োয়া থেকেই। লক্ষাধিক ভোটে জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
২০১১ সাল থেকে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র শাসক দলের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। গত বিধানসভা ভোটে প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম নিকটতম বাম ও আইএসএফ জোট প্রার্থীকে প্রায় ৮০ হাজার ৯৭৮ ভোটে হারিয়েছিলেন। বিজেপি ছিল তৃতীয় স্থানে। লোকসভা ভোটে হাজি নুরুল তাঁর নিজের এই বিধানসভা কেন্দ্রে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৯৯১ ভোটে এগিয়েছিলেন। সেবার আলাদা লড়েও আইএসএফ প্রার্থী দ্বিতীয় স্থানে এবং বিজেপি ও সিপিএম ছিল যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে। এই আবহে বিধানসভার উপনির্বাচনে বিরোধীরাও উৎসাহহীন। যেন খেলা শুরুর আগেই দেওয়াল লিখন পড়ে ফেলেছেন উৎসাহী সমর্থকরা। হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায় সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৭১ শতাংশ। বিজেপির অনেক জেলা নেতা সংখ্যালঘু মুখ চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে বিমল দাসের নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। এমনিতেই দুর্বল সংগঠন, তার উপর প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভের কারণে বহু কর্মী গৃহবন্দি। জীবনে প্রথমবার ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ বিমলবাবু বলেন, প্রথমে কিছু সমস্যা থাকলেও এখন সেসব মিটে গিয়েছে। বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ২৭৯টি বুথের মধ্যে গত নির্বাচনে ১৫০টিতে এজেন্ট বসেছিল। এবার তা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, বাড়তেও পারে, আবার কমতেও পারে। কিছু সময় চুপ থাকার পর হাতে গোনা কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে তিনি দলীয় পতাকা লাগানোর কাজ শুরু করেন।
আইএসএফ প্রার্থী বসিরহাট মহকুমা আদালতের তরুণ আইনজীবী পিয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্নীতি, বেহাল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে প্রচার করছি। মানুষ ভোট দিতে পারলে বহু হিসেব বদলে যাবে। সব বুথে এজেন্ট থাকবে কি না তার জবাবে পিয়ারুল বলেন, চেষ্টা শুরু হয়েছে। যদিও সিপিএম সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে তারা মোট ১২৩টি বুথে এজেন্ট দিতে পেরেছিল। আইএসএফের এজেন্ট সংখ্যা ছিল আরও কম।
অন্যদিকে, হাজি সাহেবের মৃত্যুর পর শাসক দলের বহু নেতাই প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু হাজি সাহেবের ছেলে শেখ রবিউল ইসলাম প্রার্থী হওয়ায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে অনেকের। সংঘবদ্ধ তৃণমূলের ছবি তুলে ধরতে ময়দান চষছেন শাসক দলের পোড়খাওয়া ও নির্ভরযোগ্য যোদ্ধা সুজিত বসু। বিভিন্ন সভায় উপচে পড়ছে ভিড়। রবিউল বলেন, অভিমানী নেতাদের কাছে আমি নিজে গিয়ে কথা বলছি। মান-অভিমান কেটে যাচ্ছে। সকলেই জানেন, দলের নাম তৃণমূল এবং নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার লিড টপকে যেতে চাইছেন সকলেই।