• কলকাতার গঙ্গায় স্নানও কি দিল্লির যমুনার মতোই বিপজ্জনক? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in
    আজ তক | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
  • প্রবল দূষণের ধারায় বইছে যমুনার জল। উত্তরাখণ্ডের যমুনোত্রী থেকে উৎপত্তি হয়ে দিল্লির বুক চিরে বেরোতেই ফেনিল যমুনার ভয়াবহ রূপ রীতিমতো আতঙ্কিত করে তোলে। সেই জলে পা ডোবালেও ত্বকের রোগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। দূষিত যমুনার জলে বিষাক্ত কেমিক্যাল ছাড়াও মিশেছে রাজনীতির রং। অন্যদিকে, গঙ্গার অবস্থাও যে খুব একটা ভালো তা নয়। প্লাস্টিক, বর্জ্য, মল-মূত্র নিয়ে পবিত্র গঙ্গা হুগলি নামে বইছে বাংলার বুকে। দুর্গাপুজোর পর কালীপুজোর বিসর্জন পেরিয়েছে, সামনে ছট। যমুনার তুলনায় গঙ্গার গতি প্রকৃতি আলাদা হলেও কেমন আছে শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া গঙ্গা নদী? ঝুপ করে ডুব মেরে নেওয়ার আগে গঙ্গার স্বাস্থ্যের ব্যাপারটাও জেনে নেওয়া জরুরি। নাহলে, পূণ্য লাভে নিজের স্বাস্থ্যের বারোটা বেজে যেতে পারে।

    কলকাতার গঙ্গা চিত্র
    শান্ত সৌন্দর্য, মৃদুমন্ত হাওয়া বইলেও গঙ্গায় ভাসতে থাকা প্লাস্টিকের বোতল, বর্জ্য, প্লাস্টিক, নোংরায় ভরা নদীর দুই পার, পরিত্যক্ত কাপড়, মূর্তি, যা গঙ্গার বর্তমান অবস্থার একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। গঙ্গার কারণে পশ্চিমবঙ্গের নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে জলকষ্ট তেমন অনুভব করতে হয়নি। হাজার হাজার মানুষ এর উপর নির্ভরশীল। তা সত্ত্বেও সজ্ঞানে 'পবিত্র গঙ্গা'- কে অশুদ্ধ করে চলেছে সাধারণ মানুষ। কোনও কড়া প্রহরা, বিধিনিষেধ না থাকায় গঙ্গার জল পরিষ্কার রাখার মতো সদিচ্ছা প্রশসানের তেমন একটা নেই তা গঙ্গা চিত্রতেই দ্রষ্টব্য।

    'কলকাতার গঙ্গা আদৌ স্নানের যোগ্য নয়, শুধু দেখার যোগ্য'
    এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেছেন, "কলকাতার গঙ্গার জল আদৌ স্নানের যোগ্য নয়, শুধু দেখার যোগ্য। দিল্লির যমুনায় অত বেশি জোয়ার ভাঁটা হয় না। যমুনায় কল কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল এসে মেশে। যে কারণে গঙ্গার সঙ্গে যমুনার কোনও তুলনা হয় না। তবে আমাদের এখানে বান এলে ১৫-২০ ফুট জল ওঠে। এখানে জোয়ার ভাঁটা না হলে গঙ্গার গঙ্গাপ্রাপ্তি হয়ে যেত। জোয়ারের পরিষ্কার জল এসে নোংরা ধুয়ে দিয়ে যায় বলেই আমরা বেঁচে আছি।" 

    দূষিত গঙ্গা নিয়ে তাঁর আরও মন্তব্য, "সামনেই ছট। তবে ৩৬৪ দিন গঙ্গায় বর্জ্য ফেলে, মল-মূত্র ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে একদিন গঙ্গাকে পুজো করা ভক্তির লক্ষণ নয়। গঙ্গাকে মাতৃসম, দেবতাসম হিসেবে পুজো করতে হবে।" 

    গঙ্গা দূষণ রোধে কী করা যেতে পারে?
    গঙ্গা পরিষ্কার রাখতে কোটি কোটি অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। তবুও দূষণ রোখা যাচ্ছে কি? এ প্রসঙ্গে সুভাষবাবু আরও বলেন,"অর্থ গেল, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষেরা বড়লোক হল, তবে পবিত্র গঙ্গাটা গরিব হয়ে গেল। খুবই দুর্ভাগ্যজনক।" তাঁর মতে, গঙ্গা বাঁচাতে হলে মানুষের মধ্যে বোধ তৈরি হতে হবে।

    অন্যদিকে, কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পরিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, "প্রতি বছরের মত এবছরও নিয়ম মেনে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর গঙ্গা পরিষ্কার করা হয়েছে। ছটের আগে ও পরে পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। কলকাতার গঙ্গায় কোনও দূষণ নেই।" তবে গঙ্গার গঙ্গাপ্রাাপ্তি তাঁরা রুখতে পারেননি বলেই মত সুভাষবাবুর। তাঁর মতে, কলকাতা ও হাওড়ার গঙ্গা এখন সবথেকে বেশি দূষিত। সবশেষে, কলকাতার 'লাইফলাইন' রক্ষায় গঙ্গাকে নোংরা না করারই পরামর্শ দেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। এতে যেমন দূষণ রুখে দেওয়া যাবে, তেমনই কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থও সাশ্রয় হবে।
  • Link to this news (আজ তক)