• রাস্তায় দাঁড়ালেই থমকে যায় গাড়ি, বর্ধমান শহরের ‘ভোলা’কে নিয়ে মাতোয়ারা নেটদুনিয়া
    বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বর্ধমানের ঘোড়দৌড়চটিতে লালবাতির নিষেধ থাকে না। ট্রাফিক পুলিসের কড়াকড়িও নেই। তবুও গাড়ির গতি থমকে যায়। রোমিওদের স্টান্টবাজি বন্ধ হয়ে যায়। সৌজন্যে ‘ভোলা’। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলে সবাইকে সমঝে চলতে হয়। স্থানীয়রা বলছেন, ভোলার সৌজন্যে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। দূর থেকে তাকে দেখেই চালকরা গাড়ির গতি কমিয়ে দেয়। সহজেই স্থানীয়রা রাস্তার এপার থেকে ওপার হয়ে যেতে পারেন। রোজ নিয়ম করেই সে রাস্তায় আসে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ‘ডিউটি’ করার পরই নিজের আস্তানায় ফিরে যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে অনেকে আবার ভক্তিতে তার সামনে মাথা নত করে। জোড়হাত করে প্রণাম জানায়। কেউ আবার কপালে তিলক এঁকে দেয়। তেল নিয়েও অনেকে হাজির হন। খাবারের অভাব হয় না। 

    ভোলা আসলে একটি পূর্ণবয়স্ক ষাঁড়। যেমন তার বৃহৎ শরীর তেমনই লম্বা সিং। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলেও সে কাউকে আঘাত করেনি। সিং নাড়িয়ে ভয়ও দেখায় না। জোর করে খাবার তুলে খাওয়ার অভ্যাসও তার নেই। সে এলাকার সবারই প্রিয়জন। তার নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল রয়েছে। বিভিন্ন পোজের ছবি আপলোড করা হয়। নেট দুনিয়ার কাছেও সে আপনজন হয়ে উঠেছে। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ভোলা এলাকার বাইরে খুব বেশি যায় না। সে ঘোড়দৌড়চটি এলাকাতেই থাকে। প্রিয়রঞ্জন চৌধুরী নামে এক পথচারী বলেন, আসতে যেতে ওকে দেখি। অনেক ষাঁড় তাড়া করে। সিং নাড়িয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ভোলা সম্পূর্ণ আলাদা। সে ভয় দেখায় না। উল্টে জীবন রক্ষা করে। তার ভয়ে এই এলাকায় কেউ দ্রুতগতিতে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেয় না। অন্যান্য রাস্তার মোড়গুলিতেও এরকম আরও কিছু ভোলা থাকলে হয়তো দুর্ঘটনা কমে যেত। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, একবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলে আর সরতে চায় না। অনেকে তাকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। খিদে পেল সে দোকানগুলিতে হাজির হয়ে যায়। ভালোবেসে অনেকেই তাকে খাবার দিয়ে যায়। মাঝে একবার ও অসুস্থ হয়েছিল। কিছুদিন পর আবার সুস্থ হয়ে ‘ডিউটি’ করছে। অল্পবয়সিরা অন্য রাস্তায় স্টান্টবাজি করে। কিন্তু এখানে সেই ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখায় না। ভোলা তাদেরকেও কিছু করে না। কিন্তু রাস্তায় থাকলে তার নামটাই যথেষ্ট। দূর থেকে গাড়ির গতি কমিয়ে সাবধানে রাস্তা পার হয়। 

    এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বহু চালকই ট্রাফিক সিগন্যাল মানতে চায় না। সিভিক ভলান্টিয়ার না থাকলে তাদের পোয়াবারো। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। ট্রাফিক সিগন্যাল উপেক্ষা করে। লালবাতির ধার ধারে না। কিন্তু ঘোড়দৌড়চটিতে সবাই জব্দ। সিগন্যালিং ব্যবস্থা না থাকলেও ভোলার ভয়ে সবাই জব্দ। তাকে দেখে গাড়ির পিকআপ এমনিতে যেন কমে আসে। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)