আধ্যাত্মিকতা থেকে ভ্রমণ, জগদ্ধাত্রীপুজোয় রকমারি থিমের ছোঁয়া কৃষ্ণনগরে
বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি কৃষ্ণনগর: জগদ্ধাত্রী পুজোর সৃষ্টিভূমি কৃষ্ণনগর এ বছর থিম ভাবনায় নজর কাড়তে চলেছে। আধ্যাত্মিকতা থেকে ভ্রমণ, রকমারি থিম ফুটে উঠছে মণ্ডপে মণ্ডপে। থিম নিয়ে পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে ঠান্ডা লড়াইও শুরু হয়েছে। কিন্তু সকলের একটাই লক্ষ্য, দর্শনার্থীদের কাছে জগদ্ধাত্রী পুজোর আকর্ষণ অনেকটা বাড়িয়ে তোলা। মহাকাল লোক, সুধার রামমন্দির, অঘোরীর মতো থিম দেখা যাবে কৃষ্ণনগরে। যা শহরের প্রাচীন আধ্যাত্মিকতাকেই তুলে ধরবে বলে মনে করছেন শহরবাসী। পাশাপাশি বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরের আদলেও মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে শহরে। সেই সঙ্গে থাকছে দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ। দেশ এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ, ঐতিহাসিক স্থান প্রাধান্য পাচ্ছে থিম ভাবনায়। পাল্লা দিয়ে আলোকসজ্জাও নজর কাড়বে দর্শনার্থীদের, দাবি পুজো কমিটিগুলোর।
কৃষ্ণনগরের আদি বাসিন্দা সঞ্জিত দাস বলেন, ‘বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল এই কৃষ্ণনগর থেকেই। আগেও বহু পুজো হতো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর জাঁকজমক অতীতের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। যার অন্যতম কারণ, থিম পুজোর চল বেড়ে যাওয়া। যা দর্শনার্থীদের টানছে।’
এবছর কৃষ্ণনগরে আধ্যাত্মিকতার বিভিন্ন থিমের মধ্যে আদি ঘরামিপাড়ার ‘অঘোরি শিব তাণ্ডব’ সকলের নজর কেড়েছে। বাস্তবে শিবের তাণ্ডব কেমন হয়, তা দর্শনার্থীদের দেখানোর জন্য হরিয়ানা থেকে লোক আসছে। যারা তন্ত্র সাধনার সঙ্গে যুক্ত। এমনকী শিবের প্রলয় নৃত্যও পরিবেশন করবেন তাঁরা। পুজো উদ্যোক্তা সনৎ বিশ্বাস বলেন, এই থিমকে ফুটিয়ে তোলার জন্য আমাদের এবছর খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। শিবের তাণ্ডব এবছর লাইভ দেখানো হবে আমাদের পুজো মণ্ডপে। তান্ত্রিকরা কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবেন। সেই সঙ্গে আলোকসজ্জা আমাদের এবারের থিমকে ফুটিয়ে তুলবে।’ এর পাশাপাশি রাধানগর আদি বারোয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরে জগদ্ধাত্রীর আরাধনা করবে। একইভাবে মধ্যভারতের উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরকে থিম হিসেবে তুলে ধরছে। যেখানে শিব ও জগদ্ধাত্রী পুজোর মেলবন্ধন দেখা যাবে। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর শহর ঘুরে দেখা যায়, জোরকদমে মন্ডপসজ্জার কাজ চলছে। দিনরাত এক করে থিমের খুঁটিনাটি মানুষকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। জানা যাচ্ছে, আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিমা থেকে মণ্ডপ গোটাটাই শেষ করে হবে।
অন্যদিকে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, স্মৃতিসৌধ, ধর্মীয় স্থান, যা পর্যটক মহলের কাছেও সাড়া ফেলেছে, সেই সমস্ত জিনিস কৃষ্ণনগরেই দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলো। যেমন, শহরের বিখ্যাত পুজো আমিনবাজার বারোয়ারির এবারের থিম রোমের ভ্যাটিকান সিটি প্যালেস। খ্রিস্টধর্ম ও হিন্দুধর্মের এক সমন্বয় এবছর গড়ে তুলেছে আমিনবাজার বারোয়ারি। যেখানে উভয়ধর্মের বিভিন্ন মূর্তি ফুটে উঠবে মণ্ডপসজ্জায়। পুজো কমিটির সদস্য রাহুল দত্ত বলেন, ‘এবছর থিমের পাশাপাশি লেজার শো থাকছে। আলোকসজ্জায় দুই ধর্মের মেলবন্ধন আমাদের এখানে দেখা যাবে।’ অন্যদিকে চৌধুরীপাড়া বারোয়ারির এবারের থিম ‘মিশরের অন্তরালে’। ঘূর্ণি ভাই ভাই সঙ্ঘ মাইসোরের চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরে আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে। এছাড়াও ঘূর্ণি স্মৃতি সঙ্ঘ তৈরি করছে গুজরাতের বৈষ্ণোদেবী মন্দির। এছাড়াও ক্লাব রেনবো এবছর ক্যালিফোর্নিয়ার হিন্দু মন্দিরকে ফুটিয়ে তুলছে মণ্ডপে।