• ইসলামপুরে বেয়াড়া ডেঙ্গু, মৃত্যু যুবকের, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদপ্তর
    বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: নভেম্বরেও ইসলামপুরজুড়ে দাপট দেখাচ্ছে ‘বেয়াড়া’ ডেঙ্গু। একবারে লাগামছাড়াভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এরমধ্যেই মঙ্গলবার সকালে ইসলামপুরে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্যদপ্তর ময়দানে নামলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদপ্তর।

    ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিনগর-১ ব্লকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছুঁইছুঁই। সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু পজিটিভ ছিল ৩৭জন। সরকারি খাতায় সংখ্যাটা খানিকটা কম মনে হলেও বাস্তব ছবি অনেকটাই আতঙ্কের। বেশিরভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে ভুগছেন। প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোরে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভিড় করছেন রোগীরা। ব্লক প্রশাসনের তরফে তাঁদের রক্তের নমুনা নেওয়া হচ্ছে। অনেকে আবার জানাজানির ভয়ে হাসপাতালমুখীও হচ্ছেন না। মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে।

    মঙ্গলবার সকালে ইসলামপুরের নশিয়তপাড়ার রাহুল শেখ(৩০) নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সপ্তাহখানেক আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। 

    মৃতের কাকা ইউসুফ আলি বলেন, ভাইপো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। তবে পরিবারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের কেউ যোগাযোগ করেনি। বাড়ির পিছনে নোংরা আবর্জনা জমে রয়েছে, সেগুলি সরাতেও কোনও ভূমিকা নেই পঞ্চয়েতের। মৃতের প্রতিবেশী জামিরুল ইসলাম বলেন, পাড়ার অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। অথচ পঞ্চায়েত প্রশাসনের তরফে কারও দেখা পাওয়া যায়নি। এভাবে চলতে পারে না। তাঁদের অদক্ষতার জন্যই এভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

    স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন এক প্রকার ব্যর্থ। শুধুমাত্র খাতায় কলমে কিংবা শিবির করেই পঞ্চায়েত-প্রশাসন দায় সারছে। অথচ ঝোপঝাড় পরিষ্কার থেকে জল জমা রুখতে কোনও ভূমিকা নেই প্রশাসনের। বিভিন্ন জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে। এমনকী ডেঙ্গু নিয়ে সেভাবে সচেতনতামূলক প্রচার নেই বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

    স্বাস্থ্যদপ্তরের অবশ্য দাবি, ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের তরফে বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গুনাশক ফগিং স্প্রে করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতের তরফে চলছে সচেতনতামূলক প্রচার। প্রতিনিয়ত চলছে ফিভার ক্যাম্প। স্থানীয় পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্যা মনিরা পারভীন বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পঞ্চায়েত প্রশাসন অনেকটাই ব্যর্থ। শুধুমাত্র খাতায় কলমে কাজ করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতের তরফে বিরোধী সদস্যদের না নিয়েই মিটিং করা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।

    চক ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বেগম হাসিনা নুসরত বলেন, আমাদের লোকসংখ্যা কম। মাত্র ১৫ জন লোক নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তারা দিনরাত পরিশ্রম করছে। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আমাদের তরফে সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ওই সদস্যা যে অভিযোগ করছেন, তা ঠিক নয়। বিএমওএইচ হাসানুল হাসিন বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ওই যুবককে বুধবার রেফার করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয়েছে। মাঝে ‘ডানা’র প্রভাবে বৃষ্টির কারণেই ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। তবে আমাদের তরফে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের সবরকম চেষ্টা চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)