সংবাদদাতা, কাটোয়া: আগের দিনে ক্রোশের পর ক্রোশ পালকিতে চড়েই নতুন বউ আনতে যেতে হতো বরকে। হুম নারে... হুম নারে... বলে বেহারারা পালকিতে বর-বউ নিয়ে আসতেন। এখন যুগ বদলেছে। তাই মানুষের শখেরও পরিবর্তন ঘটেছে। দামি গাড়ির যুগে পালকির কদর কমেছিল। তবে নতুন প্রজন্মের কাছে আবার পালকির চাহিদা বাড়ছে। সামনেই বিয়ের মরশুমের জন্য এখন থেকেই পালকি বুকিং করতে মঙ্গলকোটের বাউরা গ্রামে হিড়িক পড়ে গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকেও আসছে বুকিং। মঙ্গলকোট থেকে বোলপুরে পালকির জন্য শাখা অফিস খুলতে হয়েছে। কাজ পেয়ে খুশি বেহারারা। বহু গ্রামে অনেকেরই আগে পালকি ছিল। জমিদার বাড়ি ছাড়াও অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে কাঠের পালকি করিয়ে রেখেছিলেন। বিয়ে ছাড়াও অনেকে পালকি ব্যবহার করতেন। তখন পালকি বয়ে আনার জন্য বেহারারাও আসতেন বিভিন্ন গ্রাম থেকেই। সমাজে যতই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, পালকির কদর ততই কমতে শুরু করেছে। দামি গাড়ির দৌলতে পালকি এক্কেবারে অচল হয়ে পড়ে। তবে নেটপ্রজন্ম আবার পালকিতেই মজেছে। শখ পূরণে পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ফুল দিয়ে সাজিয়ে এলাকায় ঘোরার জন্য পালকির খোঁজে মরিয়া হচ্ছেন অনেকেই। ফটোশ্যুটের জন্যও বুকিং হয়েছে। তবে এবছরের বুকিং শেষ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলকোটের বাউরা গ্রামে মিহির ঘোষের বেশ কয়েকটি পালকি রয়েছে। সেখানে এখন থেকেই গত কয়েকদিন ধরে ভিড় বেড়েছে পালকির খোঁজে। নদীয়া, হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেও পালকির খোঁজে আসছেন বাউরা গ্রামে। তাই মিহিরবাবু আবার নতুন করে বেহারা দিয়ে পালকি ভাড়া দিচ্ছেন। তিনি বলেন, একটা সময় আমাদের বাউরা গ্রামে অনেক পালকি ছিল। আমার দাদা নারায়ণ ঘোষের পালকি ছিল। আমার বাবার আমল থেকেই পালকি আছে বাড়িতে। ১৫ বছর ধরে পালকি ঘরে রেখে দিতে হয়েছিল। কিন্তু এখন কয়েক বছর ধরে দেখছি পালকি করে আবার বিয়ে করতে যাচ্ছেন অনেকেই। এবছরের বিয়ের মাসগুলিতে একটা দিনও আমার ফাঁকা নেই। নতুন করে পালকি করাতে হয়েছে। এতে আমারও ভালো লাগছে। তবে এখন বেহারা পাওয়াই মুশিকল হয়ে পড়ে। এখন পালকি ভাড়া ও বেহারা মজুরি নিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে। ছ’জন বেহারা পালকি নিয়ে গোটা গ্রাম বা শহর ঘোরাবে। মিহিরবাবু আরও জানান, আগে দুর্মুঠ, নহাটা গ্রামে বেহারা পাওয়া যেত। এখন মুর্শিদাবাদের গোকর্ণ, সোনারুন্দি এলাকা থেকে পালকি বয়ে আনার জন্য বেহারা আনতে হয়। এখন কয়েক বছর ধরে বিয়ের মরশুমগুলি খালি নেই। প্রত্যেকটাতেই পালকি জোগান দিতে পারছি না।
কারণ, পুরনো যুগের পালকি মানুষের কাছে একটা নস্টালজিয়া। তাই তো এখন পালকি বয়ে আনার বেহারারাও বলছেন, দেখাশোনা গাড়িতে হলেও বিয়ে হবে পালকিতেই। ফের হুম নারে…হুম নারে…শব্দে মুখরিত হচ্ছে মঙ্গলকোটের বাউরা গ্রাম। • নিজস্ব চিত্র