ফুলের মধুও নিরাপদ নয়! রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োগে কমছে মৌ পালন
বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, করিমপুর: গত কয়েক বছর ধরে জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৌ চাষ। নভেম্বর মাসে সর্ষেফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে শুরু করেন চাষিরা। কিন্তু এবার মরশুমের শুরুতে চাষ নিয়ে চিন্তায় করিমপুরের মৌ চাষিরা। অনেক চাষি মৌমাছি পালন ছেড়ে অন্য কাজ বেছে নিচ্ছেন। এলাকার চাষিরা জানান, বর্তমানে ফসলে কীটনাশকের ব্যবহার মৌ চাষে খারাপ প্রভাব ফেলেছে। বছর দশেক আগেও করিমপুর এলাকায় বাইরের ও স্থানীয় অনেক চাষি মৌ চাষ করতেন। এখন সেই সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। যে কজন মৌ চাষ করছেন তাঁদের বেশিরভাগই এখন অন্য জেলায় রয়েছেন। তাঁরা আরও জানান, মূলত মাঠের বিভিন্ন ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। কাঠের তৈরি বাক্সে তাদের রাখা হয়। প্রতি বাক্সে দশটি করে প্লেট থাকে, যেখানে কৃত্রিমভাবে তৈরি বাসার মধ্যে মৌমাছিরা থাকে। প্রতিদিন সেই বাক্স খুলে দিলে ওই জায়গা থেকে তারা প্রায় তিন কিমি ব্যাসার্ধ এলাকায় ঘুরে ঘুরে মধু নিয়ে সেই নির্দিষ্ট বাসায় এনে জমা করে। গত পাঁচ-সাত বছর থেকে এলাকায় আনাজ চাষে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণে মৌমাছি মারা যাচ্ছে। করিমপুরের মৌ চাষি সোমেন বিশ্বাস বলেন, গত বছরে আমার ১২০ বাক্স মৌমাছি ছিল। এবছর সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৫টি। যখন মাঠে কোনও ফসলে ফুল থাকে না তখন বাজার থেকে বেশি দামে কেনা চিনি জলে গুলে মৌমাছির খাবার বানাতে হয়। তাই আশ্বিন মাসে করিমপুর থেকে বাঁকুড়ার তালডাংরায় মৌমাছি নিয়ে এসেছি। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ অবধি এখানে ইউক্যালিপটাস ফুলের মধু সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরব। তখন ওখানে মাস দুয়েক সর্ষে ফুলের মধু পাওয়া যাবে। হোগলবেড়িয়ার ভজন প্রামানিক বলেন, সবচেয়ে উন্নত ও ভালো মানের মধু পাওয়া যায় সুন্দরবন এলাকায়। সেখানে গরাণ, কেওড়া প্রভৃতি ফুলের মধুর মান ভালো। আগে এই এলাকাতেও ধনে, কালো জিরে ও সর্ষে ফুল থেকে ব্যাপক মধু উৎপাদন হতো। কিন্তু এখন চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ হচ্ছে না। লাভ না হওয়ায় কয়েক বছর আগে এই চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করছি। যদিও এক কৃষি আধিকারিক বলেন, এখন জেলায় চাষে অতি বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় না। তাই মৌমাছির ক্ষতির আশংকা নেই। চাষিরা চাইলে এখানে মৌমাছির বাক্স বসাতেই পারেন।