উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে নাচ, নিয়ম ভেঙে চূর্ণি নদীতে দেদার ভাসান
বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: একদিকে শব্দবাজি, অন্যদিকে ডিজে। সোমবার সন্ধ্যায় রানাঘাট শহরের বাসিন্দারা ভুগল চড়া ‘ডেসিবেল’-এর কারণে। আর শব্দদানবের তাণ্ডব নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখল পুলিস। এরই পাশাপাশি চূর্ণি নদীতে বিসর্জন ঠেকানোর কথা মুখে বললেও বাস্তবে প্রশাসনের কাজে তার ন্যূনতম প্রতিফলন দেখা গেল না। ফলস্বরূপ, মঙ্গলবার সকালে চূর্ণিজুড়ে দেখা মিলল ভাসমান কাঠামোর।
শব্দবাজি এবং ডিজে ঠেকানোর গুরুদায়িত্ব থাকে পুলিসের কাঁধেই। প্রতি বছর বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে তারা এই নিয়ন্ত্রণের কাজে নামলেও বাস্তবে ডাহা ফেল করে। চলতি বছরও একইভাবে জোড়া শব্দদৈত্য ঠেকাতে কোমর বেঁধেছিল পুলিস। কালীপুজোর দিন শব্দবাজি খানিক ঠেকাতে সক্ষম হলেও, বিসর্জনে ডিজে নিয়ন্ত্রণ করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। সোমবার সন্ধ্যার ছবি বলছে, শহরজুড়ে শোভাযাত্রা করেছে অন্তত দুই ডজন প্রতিমা। প্রায় প্রত্যেকটির সঙ্গেই ছিল চড়া আওয়াজের ডিজে। রানাঘাট শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, সেই উচ্চ ডেসিবেলের ডিজে সঙ্গে করেই প্রতিমা নিরঞ্জনে গিয়েছে পুজো কমিটিগুলি। এরমধ্যে নিরাপত্তার জন্য রাস্তার একাধিক জায়গায় পুলিস পোস্টিং থাকলেও তারা শহরবাসীকে শব্দদানবের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। রানাঘাটের এসডিপিও সবিতা গটিয়াল বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখছি গোটা বিষয়টি। অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আবার চূর্ণি নদীতে বিসর্জন নিয়ে নিজেদের ‘কড়া’ অবস্থানের কথা জানিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে ঠিক উল্টো। বিসর্জন ঠেকানো তো দূর অস্ত, দূষণের সম্ভাবনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার বিসর্জন হয়েছে চূর্ণি নদীতেই। অনেক ঘাটে পর্যাপ্ত সাফাই করে, আলোর ব্যবস্থা করে কার্যত ‘আমন্ত্রণ’ জানানো হয়েছে নদীতে বিসর্জনের জন্য। মঙ্গলবার সকালে চূর্ণি নদীতে দেখা মিলেছে ভাসমান কাঠামোর। অর্থাৎ কেবল বিসর্জনই নয়, পরবর্তীতে তা ঝটপট তুলে ফেলার ব্যাপারেও বেশ গড়িমসি ছিল প্রশাসনের। সামগ্রিক এই ছবি দেখে ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের দাবি, প্রশাসন মুখে ঠিক যতটাই কঠোর, বাস্তবে ততটাই ঢিলেঢালা। যদিও বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা যথাসম্ভব চূর্ণিতে বিসর্জন ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর দ্রুত তা তুলেও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতগুলিতে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কম। সেখান থেকে যে সমস্ত প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে, সেগুলি পরে ভেসে এসে আমাদের শহরের বিভিন্ন ঘাটগুলিতে আটকে গিয়েছে। আমরা নিরঞ্জনের পর ঘাট সংলগ্ন জল তো বটেই, আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলমালাও তুলে এনেছি। পুজো কমিটিগুলিকে বারণ করা হয়েছিল চূর্ণি নদীতে বিসর্জন করতে। নদী যে ক্রমশ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে তা বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা মানুষের সচেতনতার উপর নির্ভরশীল। সবটা প্রশাসনের হাতে থাকে না। যদি আর কোথাও কাঠামো পড়ে থাকে আমরা দ্রুত সরিয়ে দেব। - নিজস্ব চিত্র