নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: পারিবারিক বিবাদের জেরে রাস্তা থেকে মৃতদেহ ‘ছিনতাই’য়ের চেষ্টার অভিযোগ। শ্মশানযাত্রীদের মারধরের পাশাপাশি ভাঙচুর শববাহী যান। এরই জেরে দুর্ঘটনায় মৃত কলেজ ছাত্রীর দেহ নিয়ে পুলিসের দ্বারস্থ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘক্ষণ জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় পড়ে রইল দেহ। এনিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। পরে পুলিসের হস্তক্ষেপে দেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে পাঠানো হয়। শববাহী যান ভাঙচুর ও চালককে মারধরের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে মৃত ছাত্রীর বাবার পরিবারের পাশাপাশি মামার বাড়ির পক্ষ থেকেও অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত বলেন, তিনটি অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
বন্ধুর সঙ্গে গাড়িতে কালীপুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন জলপাইগুড়ির দেবনগরের বাসিন্দা কলেজছাত্রী সঞ্চারী সরকার (১৯)। লাটাগুড়ি থেকে জলপাইগুড়িতে ফেরার পথে বৌলবাড়ি এলাকায় বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় গাড়িটির। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সঞ্চারীর বন্ধু বিশেষ পালের (২১)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সঞ্চারীকে। সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়। এদিন বিকেলে জলপাইগুড়িতে সঞ্চারীর দেহ পৌঁছতেই বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তাঁর বাবার ও মায়ের পরিবার।
মৃত ছাত্রীর বাবা অনেকদিন আগে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে সঞ্চারীকে নিয়ে তাঁর মা দেবনগরে বাপের বাড়িতে থাকতেন। সঞ্চারীর বাবার বাড়ি সেবাগ্রামে। কিন্তু ওই পরিবারের সঙ্গে সঞ্চারী ও তাঁর মায়ের সেভাবে যোগাযোগ ছিল না। অভিযোগ, এদিন মেয়ের দেহ পৌঁছনোর পর সঞ্চারীর মা জানিয়ে দেন, সেবাগ্রামে যাবে না মৃতদেহ। সোজা শ্মশানে যাবে। সেইমতো সঞ্চারীর মামার বাড়ি থেকে তাঁর দেহ শ্মশানের উদ্দেশে রওনা হয়। অভিযোগ, মাঝপথে সঞ্চারীর বাবার পরিবারের লোকজন শববাহী গাড়ি আটকান। তাঁরা দাবি করেন, সঞ্চারীর বৃদ্ধ ঠাকুমা নাতনিকে শেষবারের মতো দেখতে চাইছেন। ফলে দেহ সেবাগ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ বাঁধে। শুরু হয় মারপিট। অভিযোগ, শববাহী গাড়ি ভাঙচুর ও চালককে মারধরের পাশাপাশি কার্যত দেহ ‘ছিনতাই’ করে নিয়ে যাওয়া হয় সেবাগ্রামে। এদিকে, গাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে শববাহী যানটি যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার, তারা পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। দেহ সহ ওই শববাহী যান নিয়ে তারা সোজা চলে আসে থানায়। সেখানেই দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকে দেহ। মৃতার মামা সমীর দাসের অভিযোগ, ভাগ্নির বাবার পরিবার কোনও খোঁজখবর রাখত না। এদিন তাদের বাড়িতে দেহ নিয়ে যেতে চেয়ে মাঝপথে শববাহী যান আটকে ভাঙচুর চালায় তারা। শ্মশানযাত্রীদের মারধর করে। দেহ ‘ছিনতাই’য়ের চেষ্টা হয়। মৃতার কাকা প্রীতম সরকার বলেন, সঞ্চারী আমাদের বাড়ির মেয়ে। কিন্তু ওর মা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত না। কাউকে মারধর করা হয়নি। ওরা নিজেরাই শববাহী যান ভেঙে আমাদের কাঁধে দোষ চাপাচ্ছে। ওদের লোকজন বরং আমাদের মারধর করেছে। - নিজস্ব চিত্র।