সাগর রজক, মানিকচক: মাসখানেকের মধ্যে বদলে গেল চিত্রটা। প্রতিকূলতা কাটিয়ে ছটপুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ভূতনির বন্যা কবলিতরা। একমাস আগে জলমগ্ন ছিল ভূতনির তিনটি পঞ্চায়েত। ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাচ্ছিলেন দুর্গতরা। এখন সেসব ভুলে পঞ্চায়েতের সহায়তায় ও নিজেরা চাঁদা তুলে ছটপুজোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তাঁরা। গ্রামবাসীর পাশাপাশি জোরদার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাও।
মঙ্গলবার ভূতনির বিভিন্ন ঘাটে দেখা গেল চরম ব্যস্ততার ছবি। গঙ্গার তীরবর্তী ঘাট সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। লাগানো হচ্ছে আলো এবং মাইক। কোথাও গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে নয়তো গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে সাজিয়ে তুলছেন ঘাটকে। প্রস্তুতি খতিয়ে দেখছে প্রশাসনের কর্মীরাও।
একমাস আগে ভূতনির তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা ছিল জলমগ্ন। উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর হীরানন্দপুর পঞ্চায়েতের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ দু’মাস জলবন্দি দশায় দিন কাটিয়েছেন। কেউ বাড়ির ছাদে, কেউ বাঁধের ওপর আবার অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন ত্রাণ শিবিরে। কখনও খেয়ে কখনও না খেয়ে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। প্রায় দু’মাস বন্যা পরিস্থিতিতে কাটিয়ে সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছেন সকলে। কিন্তু, বাড়ি ফিরলেও বাড়ির অবস্থা বেহাল। কাদায় ঢেকেছে বাড়ি। যত্রতত্র আবর্জনা। বাড়ির ভিতর জল জমে থাকায় ঘরের অবস্থাও বেহাল। কিন্তু, সব বাধা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাঁরা।
ঘাটে কালুটোনটোলার বাসিন্দা অঙ্গদ মাহাত বলেন, একদিন পরই ছটপুজো। ভূতনির বিভিন্ন ঘাটে তারই প্রস্তুতি চলছে। বন্যায় প্রথম কালুটোনটোলা আঘাত লেগেছিল। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম আমরা। বন্যার কারণে আমরা সব হারিয়েছি। কিন্তু পুজোয় খামতি থাকছে না। প্রতি বছরের মত এবছরও কালুটোনটোলার ৩৫০ পরিবার একত্রিতভাবে ধুমধামে পুজোর আয়োজন করছে। এলাকার এক গৃহবধূ লাকিয়া মাহাত বলেন, গঙ্গা ভাঙন রুখতে সকলেই ব্যর্থ। তাই ভগবানই আমাদের ভরসা। আর যেন ভূতনিতে ভাঙন বা বন্যা না হয়, এবারে ছট পুজোয় আমরা সূর্য দেবতার কাছে সেই কামনা জানাব। ভূতনি থানার পুলিস আধিকারিক জানিয়েছেন, ভূতনির তিনটি পঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটি বড় ঘাটে ছটপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত ঘাটকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। এই সাতটি ঘাট ছাড়াও বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রতিটি এলাকার পুকুরে জল রয়েছে। সেগুলিতেও পুজো করা হবে। সমস্ত জায়গায় সিভিক ভলেন্টিয়ার মোতায়েন করে নজরদারি চালানো হবে। - নিজস্ব চিত্র।