• কালীপুজো-দীপাবলি মিটতেই বায়ুদূষণে দিল্লিকে ছুঁল বালিগঞ্জ
    বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কালীপুজো-দীপাবলিতে মনের সুখে আতশবাজি পুড়িয়েছে বঙ্গবাসী। উৎসব মিটতেই ফল মিলল হাতেনাতে! দূষণ-দানব গ্রাস করল কলকাতাকে। শুধু তাই নয়, বায়ুদূষণে দিল্লিকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলল কলকাতার বালিগঞ্জ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, ২ নভেম্বর বালিগঞ্জ এলাকায় বায়ুদূষণের সূচক ছিল ৩০০। সেই দিন দিল্লির বায়ুদূষণ সূচক ছিল ৩১৬। শুধু বালিগঞ্জ নয়, উত্তরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১ নভেম্বর বায়ুদূষণের সুচক ছিল ৩১০। সেদিন দিল্লির বায়ুদূষণ সূচক পৌঁছে গিয়েছিল ৩৩৯-এ। প্রসঙ্গত, পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী এই সূচক ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত হলে ‘খারাপ’ এবং ৩০১ থেকে ৪০০ পর্যন্ত ‘খুব খারাপ’ বলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জনস্বাস্থ্যের উপর এই পরিস্থিতির ক্ষতিকর প্রভাব সাংঘাতিকভাবে পড়তে পারে। 

    দীপাবলির ঠিক আগে এসেছিল ‘ডানা’ ঘূর্ণিঝড়। টানা ক’দিন ঝড়-বৃষ্টির কারণে শহরের বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতি কমে গিয়েছিল। তাই ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শহরের বায়ুদূষণ সুচক ‘ভালো’ ও ‘সন্তোষজনক’ ছিল। ২৪ অক্টোবর কলকাতার বায়ুদূষণ সুচক ছিল ৪৩ (ভালো)। ২৭ ও ২৮ অক্টোবরেও বিধাননগর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সূচক ‘ভালো’ হিসেবেই নথিভুক্ত রয়েছে। ৩১ অক্টোবর অর্থাত্ কালী পুজোর দিন কলকাতা শহরের সূচক চিল ৫৭। কিন্তু ১ নভেম্বর তা বেড়ে হয়ে যায় ১৫৫। পরের দিন এসব এলাকায় ওই সূচক ২৪২ (খারাপ)-এ পৌঁছে যায়। দীপাবলির পর অবশ্য দূষণের সূচক ধীরে ধীরে কমছে। ৫ নভেম্বর বিকেল ৪টে পর্যন্ত কলকাতা শহরে বায়ুদূষণের সূচক ছিল ১৫০। ইন্ডিয়ান ক্লিন এয়ার নেটওয়ার্কের কো-চেয়ারপার্সন অজয় মিত্তল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ডানার ফলে ঝড় ও বৃষ্টিপাতের কারণে সাময়িকভাবে কলকাতার বাতাসে দূষণের সূচক ভালো পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু উত্সব শুরু হতেই তা খারাপ হতে থাকে। সচেতনতার বার্তা দেওয়ার পরেও আতশবাজি ফেটেছে। এই কারণেই সূচক খারাপের দিকে গিয়েছে।’ 

    পরিবেশ কর্মীদের দাবি, প্রশাসনকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে এমন পরিস্থিতি চলতেই থাকবে। তাঁদের আরও বক্তব্য, সমস্ত রকমের নিষিদ্ধ আতশবাজির উত্পাদন ও বিক্রি বন্ধ করা দরকার। দীপাবলির পর বালিগঞ্জ এলাকার দূষণের সূচক দিল্লিকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন তাঁরা। এমনকী, দীপাবলির পরেও কালী প্রতিমার ভাসানকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন অংশে শব্দবাজির তাণ্ডব লক্ষ্য করা গিয়েছে। পরিবেশ কর্মীরা মনে করছেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সবার আগে জরুরি। এর পাশাপাশি পুলিসি নজরদারি কড়া না হলে দিনে দিনে সমস্যা বাড়বে। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, শব্দবাজি নিয়ে কড়াকড়ির কারণে রঙিন আলোর বাজির প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। নানা ধরনের রাসায়নিক দিয়ে বিভিন্ন রংয়ের আলো সৃষ্টি করা হয়। সেই রাসায়নিক পদার্থগুলি বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরে গিয়ে দীর্ঘদিন থেকে যায়। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ভাসতে থাকে। এসব নিয়ে মানুষ সচেতন না হলে অচিরেই বিপদ বাড়বে। 
  • Link to this news (বর্তমান)