• বলাগড়ের গ্রামে ডায়েরিয়ার আতঙ্ক, মৃত্যু দু’জনের, অস্বীকার স্বাস্থ্যকর্তাদের
    বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া ও সংবাদদাতা, কালনা: বলাগড়ের ধোয়াপাড়ায় ডায়েরিয়ায় দু’জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত ওই গ্রামে ইতিমধ্যেই ৩৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার আচমকা গ্রামে ডায়েরিয়ার প্রকোপ শুরু হয়। রাতেই সাতজনকে পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার ভোরে সেখানেই এক মহিলা সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ততক্ষণে মৃত্যু এবং আরও বাসিন্দার অসুস্থতার জেরে গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকর্তারা ডায়েরিয়ার প্রকোপের কথা মানলেও, তার জেরেই মৃত্যু, একথা মানেননি।

    স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তারা জানিয়েছেন, রবিবারই গ্রামে চিকিৎসক দল পাঠানো হয়। জলও পরীক্ষা করা হয়েছে। মঙ্গলবার পরিস্থিতি দেখতে জেলার সদর মহকুমা শাসক ও বলাগড়ের বিডিও গ্রামে গিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম গুনি কিস্কু (৬৫) ও মাতল টুডু (৫৫)। তাঁরা প্রতিবেশী। মৃত গুনির পরিবারের এক শিশু সহ তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৩৬ জন চিকিৎসাধীনের মধ্যে ১৫ জন মহিলা, ৫ জন শিশু এবং ১৬ জন পুরুষ। অনেকে বাড়িতেই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। বাকুলিয়া-ধোবাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গণেশ মার্ডি বলেন, পঞ্চায়েতের পানীয় জলের উৎসগুলি পরীক্ষা করিয়েছি। সেখানে কোনও ত্রুটি মেলেনি। পুকুরের জল পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। গ্রামের দু’জন বাসিন্দা মারা গিয়েছেন। ডায়েরিয়া নিয়ে আতঙ্ক আছে। আমরা রবিবারই স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্রামে মোতায়েন করেছি। তবে সমস্যা হয়েছে যে, সম্প্রতি দু’জন হাসপাতাল থেকে সুস্থ ফিরেছিলেন। কিন্তু সোমবার রাতে তাঁরা ফের ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে জিরাট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার গ্রামে গিয়েছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক মৃগাঙ্কমৌলি কর। তিনি বলেন, গ্রামের ডায়েরিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সচেতনতা ও চিকিৎসার কাজ করছেন। স্থানীয় পুকুর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দু’জন গ্রামবাসী ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর কারণ ডায়েরিয়া নয়। 

    প্রাথমিক তদন্তের পরে পঞ্চায়েতের দাবি, সম্প্রতি স্থানীয় বেহুলা নদীতে জলস্তর বাড়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই জল নেমে গেলেও নদীর তীরবর্তী এলাকায় কিছু দূষণ তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসীরা সেই জলে গত শুক্রবার থেকে মাছ ধরতে শুরু করেছিল। তাতে প্রচুর চুনোমাছও মেলে। সেসব খেয়েই গ্রামের মানুষ ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি, গ্রামের একাধিক পুকুরেও বন্যার জল ঢুকেছিল। সেগুলির জল গ্রামবাসীরা খান। ফলে, সেখান থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। গ্রামে ইতিমধ্যেই পরিশুদ্ধ পানীয় জলের গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। তবে দু’জনের মৃত্যুর পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া দুই রোগী ফের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় গ্রামে আতঙ্ক কাটছে না।
  • Link to this news (বর্তমান)