‘রেকর্ড’ নিয়ে অভিযোগ, ফের আলোচনা চেয়ে মুখ্যসচিবকে চিঠি জুনিয়র ডাক্তারদের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার ‘রেকর্ড’ নিয়ে অসন্তুষ্ট পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। ২১ অক্টোবর নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দিন কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার ‘রেকর্ড’ হাতে পেয়েছেন চিকিৎসকরা। এই রেকর্ডেই আলোচিত কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। রেকর্ড হাতে পাওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ই-মেল করেছে পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। পাশাপাশি হাসপাতালের নিরাপত্তা, পরিকাঠামোগত উন্নতি সহ একাধিক দাবিতে ফের আলোচনা চেয়েছে এই চিকিৎসক সংগঠন।
৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন তাঁরা। তারপর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে ‘আমরণ’ অনশনে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। পরে রাজ্য সরকার তাঁদের কয়েকটি দাবিকে মান্যতা দেওয়ায় অনশন তুলে নেন। ২১ অক্টোবর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই অনশন তোলার কথা ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। নবান্নে আয়োজিত সেই বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। বৈঠকে কী কী আলোচনা হয়েছে, তা ‘রেকর্ড’ আকারে জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই রেকর্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। অসন্তোষের কারণ জানিয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ই-মেল করেন তাঁরা।
ই-মেলে জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ‘রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন’ (আরডিএ) গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকের রেকর্ডে তার উল্লেখ নেই। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ না বললেও বৈঠকের রেকর্ডে ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই নির্বাচনের জন্য আরডিএ গঠন অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের কথায়, ‘প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে আমরা আবার আরডিএ তৈরির দাবি জানাচ্ছি। ভারতীয় সংবিধানের ১৯ ধারা অনুযায়ী এই ধরনের সংগঠন তৈরি আমাদের মৌলিক অধিকার। ২১ তারিখের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তা রেকর্ডে রাখা হয়নি। আমাদের অনুরোধ, আরডিএ-র বিষয়টি উল্লেখ করে আলোচনার রেকর্ড আমাদের পাঠানো হোক।’
ইমেলে দাবি করা হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজগুলির বিভিন্ন অভিযোগ যাতে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো না হয়। জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, বৈঠকের রেকর্ড অনুযায়ী, মেডিক্যাল কলেজগুলির সমস্ত অভিযোগ প্রথমে শুনবেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ। তারপর তার রিপোর্ট স্বাস্থ্য দপ্তরের মাধ্যমে যাবে মুখ্যসচিবের কাছে। জুনিয়র ডাক্তাররা এক্ষেত্রেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, মেডিক্যাল কলেজগুলির এসব অভিযোগ অধ্যক্ষের কাছ থেকে সরাসরি মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে পাঠানো উচিত।
পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আলোচনার রেকর্ডে জানানো হয়েছে, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে মামলার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে। এই নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, কোনও একটি সংরক্ষণের মামলার কারণে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে থাকতে পারে না।
জুনিয়র ডাক্তাররা কেন্দ্রীয় রেফারেল সিস্টেম নিয়ে কিছু প্রস্তাব রাজ্য সরকারকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে কোনও মতামত জানায়নি বলে এদিন ই-মেলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা। ২১ অক্টোবরের আলোচনায় কলেজ স্তরের স্টেকহোল্ডার কমিটির বৈঠক করার দাবি জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই বৈঠক কোথাও হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, আলোচনা অনুযায়ী কলেজ পর্যায়ের অভিযোগ নিষ্পত্তি সেল তৈরির কথা থাকলেও তা হয়নি।
ইমেলে জুনিয়র ডাক্তাররা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারের কোনও উদ্যোগই চোখে পড়েনি। হাসপাতালগুলিতে ‘উইনার্স টিম’ ও ‘শক্তি টিম’ এখনও কাজ শুরু করেনি। সূত্রের খবর, ৯ নভেম্বরের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে ফের টানা আন্দোলনে নামতে পারেন বলে খবর জুনিয়র চিকিৎসক সূত্রে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের অন্যতম মুখ ত্রীনেশ মণ্ডল বলেন, ‘দেখতে দেখতে তিন মাস অতিক্রান্ত। এখনও আমাদের ১০ দফা দাবি পূরণ হল না। আলোচনা চেয়ে মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছি। ৯ তারিখের মধ্যে সমাধান না হলে আমরা পরবর্তী বৈঠকে আন্দোলনের অভিমুখ ঠিক করব।’