কান পাতা যায়নি বাজির আওয়াজে। একের পর এক ফোন গিয়েছে থানায়। কিন্তু কে শুনছে কার কথা! যে কলকাতার একাংশ বলেছিল উৎসবে ফিরব না, সেই কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে দেদারে বাজি পুড়েছে। আর এবার তার পরিণতি হল ভয়াবহ। বায়ুদূষণের পাল্লায় দিল্লিকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলল কলকাতা। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যেতে পারে কলকাতার বালিগঞ্জের দূষণের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
এদিকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের মানদন্ড অনুসারে সূচক যখন ২০১ থেকে ৩০০র মধ্য়ে তখন খারাপ। আর দূষণের সূচক যখন ৩০১ থেকে ৪০০-র মধ্যে তখন খুব খারাপ বলে ধরা হয় ।
গত ২রা নভেম্বর। বালিগঞ্জ এলাকায় বায়ু দূষণের সূচক ছিল ৩০০। আর সেদিন দিল্লিতে বায়ু দূষণের সূচক ছিল ৩১৬। আর একটু হলেই দিল্লিকে ছুঁয়ে ফেলত বালিগঞ্জ। এখানেই শেষ নয়, ১লা নভেম্বর রবীন্দ্রভারতী বিশ্বভারতী সংলগ্ন এলাকায় দূষণের সূচক ছিল ৩১০। সেদিন দিল্লির বায়ুদূষণের সূচক গিয়েছিল ৩৩৯তে।
সেক্ষেত্রে বালিগঞ্জে ছিল একেবারে ৩০০। আর ১লা নভেম্বর রবীন্দ্রভারতী বিশ্বভারতী সংলগ্ন এলাকায় দূষণের সূচক ছিল ৩১০। বর্তমানের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে। এই সূচকই বলে দিচ্ছে কলকাতার বায়ু দূষণের মাত্রা ঠিক কোন জায়গায় গিয়েছে।
মূলত বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ লা নভেম্বর থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়। আসলে তার আগে ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে কলকাতায় বায়ু দূষণের মাত্রা কিছুটা কমে গিয়েছিল। স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছিল বাতাস। কিন্তু ডানা যেতেই এল কালীপুজো। তারপরই সেখানে দূষণের মাত্রা একেবারে লাগামছাড়া।
এবার প্রশ্ন শব্দবাজি বন্ধ করার ব্যাপারে বার বার আবেদন করা হয়েছিল। আতসবাজি যেগুলি থেকে দূষণ ছড়ায় সেগুলি যাতে বেশি না পোড়ানো হয় সেই আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল পরিস্থিতি একেবারে ভয়াবহ।
এদিকে গত জুলাই মাসে দূষণ নিয়ে একটি উদ্বেগের রিপোর্ট সামনে এসেছিল। দূষণ নিয়ে একেবারে উদ্বেগের তথ্য উঠে এসেছিল দেশজুড়ে। বলা হচ্ছে গড়ে ৭.২ শতাংশ রোজকার মৃত্যু দেশের ১০টি বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরে সেটা যুক্ত রয়েছে পিএম ২.৫ হাই লেভেলের সঙ্গে। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার থেকে বেশি। আর সেই বড় শহরগুলির মধ্য়ে অন্যতম হল দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বই সহ আরও কয়েকটি।
ল্যানসেট প্ল্যানেটরি হেলথ জার্নালে এই সমীক্ষার খবর উঠে এসেছে। দিল্লিতে এই বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যু সংখ্য়া সবথেকে বেশি। তার মধ্য়ে গাড়ি থেকে দূষণ, শিল্প থেকে দূষণও রয়েছে। বলা হয়েছিল, প্রতি কিউবিক মিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম দূষণ বৃদ্ধির জেরে মৃত্যুর ঝুঁকিও দ্বিগুণ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে যে দূষণ তৈরি হচ্ছে তার জেরে মৃত্যুও বাড়ছে। বলা হচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৬ লাখ মৃত্যুর সংখ্যা রয়েছে। এই শহরগুলির মধ্য়ে অন্যতম আমেদাবাদ, হায়দরাবাদ, কলকাতা, পুনে, সিমলা, বারাণসী।