• ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চায় শাহি মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি, লক্ষ্য কি বাংলা?
    আনন্দবাজার | ০৬ নভেম্বর ২০২৪
  • চলতি অর্থবর্ষে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি। বিজেপি বরাবরই বাংলার ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে সরব। বিভিন্ন নির্বাচনে তারা ওই বিষয়ে বিবিধ অভিযোগ তুলেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক শিবিরের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে তারা সেই প্রসঙ্গ তারা আবার আলোচনায় তুলে আনবে, এটিই প্রত্যাশিত। সেই সূত্রেই মনে করা হচ্ছে, অমিত শাহের মন্ত্রকের বিষয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বিবেচ্য বিষয়ের তালিকায় তোলা হয়েছে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসকে। মনে করা হচ্ছে, বাংলাকে ‘লক্ষ্য’ রেখেই ওই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়ার উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। সেই মর্মে তারা রিপোর্টও দেবে।

    তবে দেশের অন্য রাজ্যের দিকে নজর না দিয়ে বাংলার দিকে বেশি নজর দেওয়া হলে তৃণমূল যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ওই কমিটির তৃণমূল সদস্য মালা রায়। দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা বলেন, ‘‘সংসদীয় কমিটি দেশের। সব রাজ্যের কথাই তাদের ভাবতে হয়। বিরোধীরা যা-ই বলুক, অন্য রাজ্যের তুলনায় আমাদের রাজ্যে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস অনেক কম। উত্তরপ্রদেশে যা হয়, সেটা এখানে হয় না। বাংলার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ভোটের পরে সন্ত্রাস হয় বিজেপি-শাসিত রাজ্যে।’’ বিজেপি যদি বাংলার দিকে নজর ঘোরাতে চায়, তবে তাঁরা চুপ করে থাকবেন না বলেও জানিয়েছেন মালা। তিনি বলেন, ‘‘সেটা হলে প্রতিবাদ তো নিশ্চয়ই হবে!’’ যার পাল্টা বাংলা থেকে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘বাংলার মতো নির্বাচনী সন্ত্রাস দেশে নজিরবিহীন! ২০১৬ সাল থেকে হিসাব করলে বাংলায় ভোটের সময় বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ পার হয়ে গিয়েছে।’’

    রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ রাধামোহন দাস আগরওয়াল ওই কমিটির চেয়ারম্যান। বাকি ২৯ জন সাংসদের মধ্যে ১৩ জন বিজেপি বা সহযোগী দলের। তৃণমূলের মালা ছাড়াও রয়েছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।

    ওই সংসদীয় কমিটিতে চলতি বছরে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হবে, মঙ্গলবার তার তালিকা তৈরি হয়েছে। ১০টি বিষয়ের সেই তালিকাতেই রয়েছে ভোট এবং ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস প্রসঙ্গ। সাইবার দুর্নীতি থেকে শিশুদের উপরে অত্যাচার, নকশাল সমস্যা, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, মানুষ পাচারের মতো বিষয়ও রয়েছে। সেখানে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস ছাড়াও বাংলায় ওঠা অভিযোগের তালিকায় রয়েছে অনুপ্রবেশ।

    ২০১৬ সালে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার গঠনের সময় থেকেই বিজেপি ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে লাগাতার অভিযোগ তোলে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে অভিযোগের স্বর দ্বিগুণ হয়। তৃতীয় বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দফায় দফায় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কমিটি ও প্রতিনিধি দল রাজ্যে এসেছে। ভোটের ফল ঘোষণার পরে পরেই রাজ্যে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোট এবং গত লোকসভা নির্বাচনের পরেও বিজেপি একই অভিযোগ তুলেছে। তাদের বহু কর্মী ‘ঘরছাড়া’ হয়েছেন বলে দাবি করেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সেই সুর চড়াতেই কি এই বিষয়টি সংসদীয় কমিটির বিবেচ্য বিষয়ের তালিকায় রাখা হয়েছে? কমিটির সদস্য রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীকের বক্তব্য, ‘‘সেটা কখনওই নয়। তবে এটা তো মানতে হবে যে, গোটা দেশের মধ্যে বাংলায় সব চেয়ে বেশি রক্তপাত হয় নির্বাচনে। বিরোধীদের উপরে সন্ত্রাসের সব সীমা অতিক্রম করেছে তৃণমূল।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)