• ‘ডানা’র পরে ধানে শোষক পোকার আক্রমণ, চিন্তায় কাটোয়া-পূর্বস্থলীর চাষিরা
    বর্তমান | ০৭ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে বহু ধান জমি জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পুজোর আগেই অজয় নদের জল ছাপিয়ে কেতুগ্রাম, কাটোয়া, মঙ্গলকোটের বহু এলাকায় আমনধানের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছিল। দু’বার ধানের চারা রোপণ করেও লাভ হয়নি। এবার শুরু হয়েছে বাদামি শোষক পোকার আক্রমণ। কাটোয়া, পূর্বস্থলীর একাংশ পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। 


    মহকুমার চাষিরা জানিয়েছেন, পোকার আক্রমণে ধানের জমি লাল হয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও গোল চাক হয়ে হানা দিচ্ছে বাদামি শোষক পোকা। কাটোয়া-২ ব্লকের একাংশ, মঙ্গলকোটের একাংশতে এমন রোগ দেখা যাচ্ছে। এমনকী পূর্বস্থলী-২ ব্লকের মুকশিমপাড়া অঞ্চলের কেশববাটি, জয়কৃষ্ণপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে ধানের জমিতে রোগ ছড়িয়েছে। 


    কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া মহকুমাজুড়ে এবার ৫২ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছিল। তারমধ্যে পুজোর আগে জলে ১৯ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মহকুমার পাঁচটি ব্লক মিলিয়ে ৩৫২ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছিল। তারমধ্যে পুজোর আগে ৪২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বেশিরভাগ এলাকাতেই এখন ধান গাছ প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ পেকে গিয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে ধানের জমিতে বাদামি শোষক পোকা হানা দিয়েছে বলে জানান চাষিরা। 


    কাটোয়ার চাষি সাত্তার মোল্লা, হায়দার আলি শেখ বলেন, ধান জমিতে আচমকা পোকার আক্রমণ হয়েছে। এবার বৃষ্টির জলে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেরিতে চাষ হলেও ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে। তবে পোকার আক্রমণে ধান গাছ লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক কীটনাশক প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। চাষের খরচ এবার উঠলে হয়। মঙ্গলকোটের এক চাষি বলেন, জমিতে ধান গাছের গোড়ার আশপাশে গিজগিজ করছে এই পোকা। জমির যে সমস্ত জায়গায় পোকার হামলা বেশি সেখানে চাক চাক দাগ হয়ে গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ধান জমিতে গাছ ধরে নাড়া দিলেই ঝাঁকে ঝাঁকে পোকা উড়ছে। জমির কিছু কিছু জায়গায় গাছও নষ্ট করে দিয়েছে পোকার দল। পূর্বস্থলীর চাষি রহমান শেখ, নুর জামাল শেখ বলেন, এবার দু’বার ধানের ক্ষতি হয়েছে। তারপর আবার পোকার আক্রমণ। এবার চাষে প্রচুর লোকসান হয়ে গেল। কাটোয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক প্রলয় ঘোষ বলেন, পোকার আক্রমণ হলে ঠিকমতো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। কৃষিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বহু চাষি অতিরিক্ত ফলনের আশায় জমিতে বেশি করে চারা রোপণ করেন। ফলে ওই সমস্ত জমিতে ধান গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত আলো, বাতাস পৌঁছতে পারে না। উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এই সমস্ত জমিতে বাদামি শোষক পোকার হামলা বেশি হয়। এই পোকার হামলা ঠেকাতে মাঠের জল বের করে দিতে হবে। গাছের সারিতে বাঁশ দিয়ে ঠেলা দিতে হবে যাতে ধান গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস পৌঁছতে পারে।
  • Link to this news (বর্তমান)