সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: নদীয়া রাজের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের বানপুর মাটিয়ারির রাজবাড়ির কাছের জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে আজও আলোচনা হয়। এ নিয়ে গোটা এলাকাজুড়ে রাজা, মহারাজা, রাজবাড়ি, জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে একাধিক গল্পও রয়েছে। ঠিক কত এই পুজোর বয়স সঠিক ভাবে জানা যায় না। তবে এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই জগদ্ধাত্রী পুজো হচ্ছে। গোটা কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে প্রথম মহিলা পরিচালিত জগদ্ধাত্রী পুজো এই ফুলবাড়ি পোড়ামা তলা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো। এই পুজো এবারও জাঁকজমক করে শাস্ত্রীয় রীতিনীতি মেনে হচ্ছে।
মহিলা পরিচালিত ফুলবাড়ি পোড়ামা তলা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোতে গত ছ›বছর ধরে মহিলারা সমস্ত কিছু করেন। পুজো কমিটির মহিলারা ঢাক বাজান। ফল কাটেন। ভোগের জোগাড় করেন। পুজোর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই মহিলারাই প্রসাদ পৌঁছে দেন। আবার গোটা এলাকায় ফুলবাড়ি পোড়ামা তলা সর্বজনীনের সদস্যারা চাঁদা তোলে। সব সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এই জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্রে করে গোটা এলাকার মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। পুজোতে মহিলা পরিচালিত নিয়ে তাসা, ব্যান্ডের টিমও আসে। জানাযায়, ১৬০৫ সালে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর জাহাঙ্গির সিংহাসনে আসীন হন। এই সময় আকবরের সেনাপতি মান সিংহ বারো ভূঁইয়াদের শায়েস্তা করতে নদীয়ার মাটিয়ারি এলাকায় আসেন। সেই সময় তাঁকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তায় করেছিলেন ভবানন্দ মজুমদার। তার জন্য ভবানন্দ মজুমদারকে পুরস্কারস্বরূপ জাহাঙ্গির ডঙ্কা, সিংহাসন সহ বেশ কিছু উপহার সামগ্রী দিয়েছিলেন। ভবানন্দ মজুমদার পরে মাটিয়ারি থেকে কৃষ্ণনগর চলে আসেন। ভবানন্দ মজুমদারকে নদীয়া রাজের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তাঁর নাতি মহারাজা রুদ্র রায়ের নামে এই এলাকাতেই রুদ্রেশ্বর মন্দির স্থাপনও করা হয়। তবে নদীয়ার সব থেকে বিখ্যাত মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে তাঁর একাধিক কীর্তি স্থাপন করেছিলেন। এই কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম বানপুর। এই গ্রামে আজও অনেক রাজপুত রয়েছেন। জানা যায়, ভবানন্দ মজুমদারের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে কাঠালতলা রাজপুত বালক সংঘের মাধ্যমে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই এলাকায় অস্থায়ী মিলিটারি ক্যাম্পও হয়। একবার এই এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে এই এলাকার নাম পোড়ামা তলা হয়। বছর ছয়-সাতেক আগে এখানে দুর্গাপুজোয় ক্লাবে নোটিস টাঙানো হয়। তাতে পুরনো জগদ্ধাত্রী পুজো আর করা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ থাকে। এই নোটিস দেখে এলাকার মহিলারা এগিয়ে আসেন। তাঁরা পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নেন। শুরু হয় মহিলা পরিচালিত কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো। পুজো বৈষ্ণব মতে হয়। একদিনে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পুজো হয়। পুজোতে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। পোলাও, খিচুড়ি, লুচি, পায়েস ৫ ভাজা, মিষ্টি, ফল দেওয়া হয়। গ্রামের সকলে এই ভোগ পাই। এই পুজোতে ঢাকিও মহিলা। সমস্ত কাজ মহিলারা করেন। গ্রামের এই পুজো নিয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোটা একশো বছরের বেশি সময় ধরে হচ্ছে। পুজো মণ্ডপ থেকে ১ কিমি দূরে থাকা মহারাজা রাঘব রায় প্রতিষ্ঠিত শিবমন্দির নিয়ে আজও মানুষের ভক্তিশ্রদ্ধা প্রবল। এই গ্রামে ভবানন্দ মজুমদার প্রথম নদীয়ারাজের ভবন প্রতিষ্ঠা করেন। তাই জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই গ্রামের পুজোটা রাজপুতরা শুরু করেছেন বলে যায়। পুজো কমিটিতে থাকা কৃষ্ণা সিংহ রায় বলেন, ‹আমরা পুজোটা বছর ছয়েক ধরে করছি। একসময় পুজোটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ওই দেখে গ্রামের মহিলারা পুজোটা ধরার জন্য এগিয়ে এসে শুরু করি। পুজোতে গ্রামের সকলেই অংশগ্রহণ করে।›