• বুড়ি মা-মেজো মা-ছোট মা, ৩ দেবীর পুজো ঘিরে আবেগে ভাসছে কৃষ্ণনগর
    বর্তমান | ০৭ নভেম্বর ২০২৪
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: বুড়িমা, ছোট মা ও মেজো মা-কৃষ্ণনগরের জাগ্রত তিন দেবী। জগদ্ধাত্রীপুজোয় শতাব্দীপ্রাচীন এই তিন দেবীর পুজো ঘিরে শহরবাসী আবেগে ভাসেন। এই তিন দেবীকে তাঁরা তিন বোন বলেই মনে করেন। এই তিন দেবীর আরাধনা কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রীপুজোকে এক আলাদা মাত্রা দিয়েছে।

    কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রীপুজো এই তিন দেবী ছাড়া অসম্পূর্ণই বলেই মনে করেন শহরবাসী। চাষাপাড়া বারোয়ারি বুড়ি মা, কাঁঠালপোতা বারোয়ারি মেজো মা ও কলেজ স্ট্রীট বারোয়ারি ছোট মা’র পুজোর দায়িত্ব থাকে। শহরে সমস্ত সাঙের প্রতিমা ভাসানের পর মেজো মা ও ছোট মার ভাসান হয়। তার পরই বুড়ি মার নিরঞ্জন হয়। কদমতলা ঘাটে তিন দেবীর পাশাপাশি দাঁড়ানোর দৃশ্যও জগদ্ধাত্রীপুজোর ভাসানের শেষবেলায় চোখে পড়ে।

    প্রতিবার ডাকের সাজেই তিনটি প্রতিমা সাজানো হয়। বহু বছর আগে নাকি একজন শিল্পীই তিনটি প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন আর সেই প্রথা নেই। তিনটি প্রতিমার উচ্চতার তারতম্য থাকলেও মৃণ্ময়ী রূপে তেমন পার্থক্য থাকে না। সোনার গয়নায় তিনটি প্রতিমা সাজানো হয়।

    সবচেয়ে বেশি গয়না পরেন বুড়িমা। অসংখ্য সোনার টিপে দেবীর কপাল ভরে যায়। বুড়ি মার পুজো ২৫০বছর ধরে চলে আসছে। ৯ তারিখ সন্ধ্যায় প্রতিমা সাজানো হবে। ওইদিন রাত ৪টে নাগাদ মঙ্গলঘটে জল ভরার মাধ্যমে পুজো শুরু হবে। পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, দেবীকে সোনার অলঙ্কারে সাজিয়ে তোলা হবে। সেইসঙ্গে ভোগ বিতরণ করা হবে।

    কলেজস্ট্রীট বারোয়ারির ছোট মা’র পুজো প্রায় ২০০বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে। পুজো উদ্যোক্তা কুণাল ঘোষ বলেন, আসলে পুজোর সঠিক বয়স কত-তা জানা যায় না। এটি শহরের অন্যতম ঐতিহ্যশালী পুজো।

    নিয়ম অনুযায়ী, সাঙের সমস্ত প্রতিমা ভাসান হওয়ার পর নিরঞ্জনের পথে বের হন মেজো মা। তারপর ছোট মা নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বেরোলেই, বুড়িমা’র নিরঞ্জনের পথে বেরোনোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। নিরঞ্জনের শোভাযাত্রাতেই ছোট মা ও বুড়িমাকে মুখোমুখি হতে হবে। তবেই নাকি বুড়িমার ভাসান হবে। কখনও পোস্ট অফিস মোড়, আবার কখনও থানার সামনে দুই বোন মুখোমুখি হন।

    কৃষ্ণনগরের ইতিহাসের গবেষক সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, ‘বুড়ি মা’র আগের নাম ছিল ‘চাষা মা’। কিন্তু পরে নাম বদলে বুড়ি মা রাখা হয়। সেই থেকেই কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার এরকম নাম রাখা শুরু হয়। শহরবাসী বুড়িমা, মেজো মা ও ছোট মাকে তিন বোন বলেই মনে করে। তিন দেবীর রূপ, সাজসজ্জায় মিল রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)