• স্বাস্থ্যকর্তারা ফিরে যেতেই চেনা ছবি জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে
    বর্তমান | ০৭ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: স্বাস্থ্যকর্তারা ফিরে যেতেই জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে ফিরল চেনা ছবি। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ মেডিক্যালের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোর টিকিট কাউন্টারের পাশে হাসপাতালের মেইন গেটে নিরাপত্তাকর্মীদের দেখা নেই। অবাধে ভিতরে ঢুকছেন রোগীর পরিজনরা। সবাই যে রোগীর আত্মীয়, এমনটাও নয়। অথচ দেখার কেউ নেই।

    ২৪ ঘণ্টা গেটে নজরদারির জন্য এজেন্সির মাধ্যমে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। রোগী ভর্তির সময় দেওয়া কার্ড পিছু একজনের ওয়ার্ডের ভিতরে ঢোকার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এদিন ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও হাসপাতালের মেইন গেটে কোনও নিরাপত্তাকর্মীর দেখা মেলেনি। এই সুযোগে যে যেমন খুশি হাসপাতালে ঢুকেছেন, বেরিয়েছেন। এক রোগীর আত্মীয় সরাসরি স্বীকারও করে নিয়েছেন, তাঁর কাছে কোনও কার্ড ছিল না। গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা না থাকায় ভিড়ের মাঝে নিজেকে গলিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে যান তিনি।  

    মঙ্গলবার যখন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল পরিদর্শন করছেন, তখন হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় থেকে কর্মীদের মধ্যে যে তৎপরতা চোখে পড়েছিল, বুধবার তার সিকিভাগও ছিল না। এদিন বেলা ১২টা নাগাদ দেখা যায়, সুপার স্পেশালিটির জরুরি বিভাগের গেটে খোশগল্পে মেতে রয়েছেন এক ওয়ার্ডবয়। তথচ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে রোগীকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের দুই মহিলা। তা দেখেও এগিয়ে আসেননি ওই ওয়ার্ডবয়। এই দৃশ্যের কিছুক্ষণ পরই দেখা যায়, ব্রেন স্ট্রোকের এক রোগীকে ট্রলিতে শুইয়ে ওয়ার্ড থেকে নীচে নামিয়ে আনছেন পরিবারের সদস্যরা। ডুয়ার্সের নাথুয়া এলাকার বাসিন্দা ওই রোগীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, একাধিকবার বলার পরও ওয়ার্ডবয়রা ট্রলি ধরেননি। প্রশ্ন উঠেছে, খাতায় কলমে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে ৮০ জন ওয়ার্ডবয় রয়েছেন। রোগীর পরিবারের সদস্যরাই যদি ট্রলি, হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে যান, তাহলে তাঁদের রাখা হয়েছে কেন?

    সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেডিক্যালের সুপার কল্যাণ খাঁ। তিনি বলেন, হাসপাতালের গেটে সবসময় নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার কথা। কেউ কোনও কাজে গেলে তাঁর পরিবর্তে অন্য কেউ গেটে থাকবেন। কেন মেইন গেটে কোনও নিরাপত্তাকর্মীর দেখা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ আসছে, তা নিয়ে তদন্ত করে দেখছি আমরা। সহকারী সুপারকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে সেসময় কাদের ডিউটি ছিল, তাঁদের শোকজ করতে বলা হয়েছে। ওয়ার্ডবয়রা দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও কেন রোগীর পরিবারকে ট্রলি কিংবা হুইল চেয়ার টানতে হচ্ছে, তা নিয়েও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেডিক্যাল সুপার।

    দু’দিন আগেই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত সত্তর বছরের এক বৃদ্ধাকে ট্রলিতে শুইয়ে ওয়ার্ড থেকে নীচে নামাতে দেখা যায় পরিবারের দুই মহিলাকে। ছবি সহ সেই খবর প্রকাশিত হয় ‘বর্তমান’-এ। এরপরই মেডিক্যালের সুপার নির্দেশ দেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যকর্তাদের পরিদর্শনের সময় ওয়ার্ডবয় থেকে নিরাপত্তাকর্মীরা কিছুটা সক্রিয় হলেও এদিন ফের মেডিক্যালে ফিরে আসে চেনা ছবি।
  • Link to this news (বর্তমান)