• গান পয়েন্টে ডাকাতি রাতের শহরে, গোটা লরি নিয়ে উধাও ৫ দুষ্কৃতী
    বর্তমান | ০৭ নভেম্বর ২০২৪
  • সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: দীর্ঘদিন পর ফের ডাকাতি খাস কলকাতা শহরে। বোম্বে রোড, দুর্গাপুরে এক্সপ্রেসওয়ের মতো হাইওয়ের কায়দায় বুধবার গভীর রাতে মহানগরেই ডাকাতি চালাল পাঁচ দুষ্কৃতী। অভিযোগ পাঁচজনের একটি ডাকাত দলের বিরুদ্ধে। চালককে মারধর ও লুটপাট চালিয়ে আস্ত লরি নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে তারা। বুধবার রাত পৌনে দুটো নাগাদ এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকুড়গাছির কাছে মানিকতলা মেন রোডে। কলকাতা পুলিসের সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের এক বিশেষ  সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। 

    প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লরি চালক দেবেন্দ্র চৌবে পুলিসকে জানিয়েছেন,  ‘ঘড়িতে তখন মেরেকেটে রাত ১টা ৫০। মাল ডেলিভারি সেরে লরি নিয়ে মানিকতলা মেন রোড ধরেছিলাম। যাচ্ছিলাম স্ট্র্যান্ড রোডের দিকে। লরি তখন কাঁকুড়গাছির কাছাকাছি। হঠাৎ তীব্র গতিতে আসা একটি ওয়াগনার গাড়ি আমার লরির সামনে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেল! বাধ্য হয়ে আমি লরি থামালাম।’ 

    ওই ওয়াগনারটিতে পাঁচজন ছিল দাবি করেছেন চালক। তার মধ্যে জনা চারেক  লাফিয়ে নেমে ড্রাইভার কেবিনের দরজা খুলে দেয়। উঠে যায় কেবিনে। দেবেন্দ্র চৌবে বলেন, ‘এরপর বিনা কারণে তারা আমাকে মারতে শুরু করে। একজন বের করে পিস্তল। আমাকে গান পয়েন্টে রেখে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। খুলে নেয় লরির চাবিও। তারপর লরি থেকে ধাক্কা মেরে বাইরে ফেলে দেয় আমাকে। একজন লরিটা চালিয়ে নিয়ে ঝড়ের গতিতে উধাও হয়ে যায়। লরির সঙ্গেই চম্পট দেয় সেই ওয়াগনার গাড়িও। অত রাতে ওই তল্লাটে কোনও পুলিসের দেখা মেলেনি।’ 

    স্বাভাবিকভাবেই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লরির চালক। ধাতস্থ হওয়ার পর কার্যত হাতড়ে তিনি স্থানীয় ফুলবাগান থানায় পৌঁছন। ওই রাতেই লরি চালকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত দলের বিরুদ্ধে  ভারতীয় ন্যায় সংহিতার জামিন অযোগ্য ৩১০ ধারায় লুটপাটের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয় ফুলবাগান থানার পাশাপাশি লালবাজারের ডাকাতি দমন শাখার গোয়েন্দারা একযোগে তদন্তে নেমেছেন। কিন্তু এই ঘটনায় পুলিস কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকী উধাও লরিটিরও হদিশ মেলেনি বলেই জানা গিয়েছে।  

    বহুদিন পর কলকাতার বুকে এমন ডাকতির ঘটনায় কিছুটা হলেও বেকায়দায় কলকাতা পুলিস। কারণ, লরি চালক দেবেন্দ্র চৌবে ডাকাত দলের ব্যবহৃত ওয়াগনার গাড়ির নম্বর দিতে পারেননি। ফলে ফুলবাগান থানার পুলিস ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজের খোঁজ করছেন। প্রাথমিক তদন্তে কলকাতা পুলিসের এক সূত্র জানাচ্ছে, ‘বেশ কয়েকবার লরিটির মালিকানা বদল হয়েছে। ফলে টাকা-পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত কোনও বিরোধ রয়েছে কি না, সেটাও তদন্তে দেখা হচ্ছে।’ নজর করার মতো আর একটা বিষয় হল, লরির মালিক স্ট্র্যান্ড রোডে থাকেন। বুধবার গভীর রাতে লরিটি নিয়ে চালক দেবেন্দ্র  স্ট্র্যান্ড রোডে মালিকের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই এই ডাকাতির ঘটনা। স্বভাবতই, প্রশ্ন উঠছে, তবে কি দুষ্কৃতী দলটির কাছে লরির গতিবিধি সম্পর্কে আগাম তথ্য ছিল? নাকি লরি মালিকের কোনও কর্মী  সেই ডাকাত দলকে তথ্য পাচার করেছে?  
  • Link to this news (বর্তমান)