বিশ্বজিৎ মাইতি, নৈহাটি: নৈহাটির গৌরিপুর জুটমিল বন্ধ বহুকাল। চটকলের হিন্দিভাষী শ্রমিকদের বসবাস আশপাশের এলাকায়। ছটপুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। রাজনৈতিক ভাবে গেরুয়া শিবিরের গড় হিসেবে পরিচিত এইসব এলাকা। কলেজ পড়ুয়া সুরজ সিংয়ের পারিবারিক চায়ের দোকান। ভোটের হাওয়া নিয়ে প্রশ্নে হেসে বলেন, এবার কেউই সেভাবে হাওয়া বোঝার চেষ্টা করছেনা। হাওয়াতেও ভাসছে না। অহেতুক অশান্তিতে কে জড়াতে চায়। তাছাড়া এই উপ-নির্বাচনের ফলাফলে সরকার তো বদল হবে না। গত কয়েক বছর ওই হাওয়ায় ভাসতে গিয়ে অনেককে অনেক কিছু খেসারত দিতে হয়েছে। তাই সকলে উৎসব নিয়ে রয়েছে! নৈহাটি বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরলে সুরজের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যাবে বিজেপি নেতা কর্মীদের মুখেও। এই বিধানসভা এলাকায় হিন্দিভাষী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২৮ শতাংশ।
ভর দুপুরে নৈহাটি ফেরিঘাটের অদূরে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন কিছু মানুষ। ভোটের হাওয়া নিয়ে প্রশ্নে কেউ খুব একটা কথা বলতে চাইলেন না। নাম বলতে না চাওয়া এক বর্ষীয়ান বললেন, বর্ষার উথালপাতাল ঢেউ পেরিয়ে নৌকা পাড়ে ভিড়েছিল। শীতের মরা জোয়ারে কি কোনও অঘটন ঘটে? নৌকাডুবি হবে না। অর্থ জিজ্ঞাসা করায় স্মিত হেসে বলেন, ২০২১ ও ২০২৪ সালের ভোটের কথা ভেবে দেখুন। আমরা গরিব মানুষ। মাছ ধরে খাই। বাকিরা আরও ভালো বুঝবে।
নৈহাটি মানে যেমন বড়মা। তেমন তৃণমূল জমানায় পার্থ ভৌমিক। ২০১১ সাল থেকে তিনি বিধায়ক। এবার সাংসদ হওয়ায় ওই আসনে উপ-নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনী পাটিগণিতেও এগিয়ে জোড়াফুল শিবির। গত বিধানসভা ভোটে এই আসনে পার্থ ভৌমিক প্রায় ১৮ হাজার ৮৫৫ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। চলতি বছরের লোকসভা ভোটে নৈহাটিতে শাসক দলের লিড ছিল প্রায় ১৫ হাজার ৫১৮ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা সিপিএম প্রার্থীর ভোট প্রায় ৯ থেকে ১০.৩১ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। গত দুই নির্বাচনের তুলনায় এবার গেরুয়া শিবিরের প্রচারের ঝাঁঝ কম। আড়মোড়া ভেঙে বহু কর্মী-সমর্থক এখনও রাস্তায় নামেনি। বিজেপি কর্মীরাও বলছেন, গোষ্ঠী রাজনীতির কারণে বাহুবলি অর্জুন সিং সেই অর্থে এখনও ভোট ময়দানে ঝাঁপায়নি। অন্যদিকে, বামেদের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এক সময়কার নৈহাটিতে সিপিএম এবার প্রার্থীই দেয়নি। বামফ্রন্টের নাম পাল্টাতে চাওয়া সিআইএমএলকে সমর্থন করেছে সিপিএম। নৈহাটি শহরের এক সিপিএম নেতা বলেন, শেষবার রঞ্জিত কুণ্ডু এখন থেকে জয়লাভ করে পরিবহণ মন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার তো আমরা নিজেদের প্রতীকে ভোটই দিতে পারব না। শরিক দলের নতুন প্রতীক মানুষকে চেনাতে হচ্ছে। এই হতাশার কথা অনেকের মুখেই শুনছি।
যদিও সিআইএমএল প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার বলেন, নৈহাটির চটকলের শ্রমিকদের জন্য আমাদের লড়াই প্রতিটি শ্রমিক মহল্লা ও সাধারণ মানুষ জানেন। দ্রোহকাল পর্বে নৈহাটির সাধারণ মানুষ শাসকের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে ভোট দিতে তৈরি। সিপিএম কর্মীরা আপন করে নিচ্ছে কি না, প্রশ্নের জবাবে অনেক দিন আলাদা ছিলাম। প্রাথমিক জড়তা কিছুক্ষেত্রে ছিল। এখন ধীরে ধীরে তা কমছে। মানুষ বুঝেছে বামেরাই বিকল্প। ছাত্র জীবনে এসএফআই, পরে তৃণমূল হয়ে কয়েক বছর আগে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র। অমিত মালব্য সহ রাজ্য নেতাদের উপস্থিতিতে কর্মিসভার পর তিনি বলেন, মানুষ ভোট দিতে পারলে জয় নিশ্চিত। মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। নৈহাটির রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম নেতা পরেশনাথ সরকার পরিচিত কংগ্রেস নেতা। তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে এই কেন্দ্রের বিধানসভা ভোটে আমাদের প্রার্থী ছিল না। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আমাদের প্রার্থী এখানে ৪.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। মানুষ উপকারের কথা মনে রাখলে কংগ্রেসের ফলাফল অনেককে চমকে দেবে। তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে নৈহাটি শহর তৃণমূল সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান পরিষদের (স্বাস্থ্য) সদস্য। এলাকায় ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পরিচিতিও রয়েছে। অন্যান্যবার জোড়ফুল শিবিরের সেনাপতি হয়ে ভোট ময়দানে অবতীর্ণ হতেন। এবার প্রার্থী হয়ে তাঁর বক্তব্য, অভিভাবক পার্থদা রয়েছেনই। দল সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে। বিরোধীদের দেখছি না। আমরা শুধু মার্জিন বাড়ানোর কথা ভাবছি।