নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সাতসকালে জোকা ইএসআই হাসপাতালে বিকট শব্দ। অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে ভেসে আসা সেই শব্দ শুনে ছুটে যান হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা। গা হিম করা দৃশ্য। রক্তাক্ত অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন এক যুবক। মাথা ফেটে রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘটনাস্থল।
পুলিস জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর জোকা ইএসআইয়ের ন’তলা থেকে ঝাঁপ আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের নাম রৌণক ভট্ট (২৯)। বেহালার বাসিন্দা তিনি। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে তাঁর খোঁজ মিলছিল না। পরিবারের তরফে সন্ধ্যায় বেহালা থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়। বুধবার সকাল সোয়া সাতটা নাগাদ তাঁর দেহ উদ্ধার হয় জোকা ইএসআইয়ের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথের ঠিক পাশেই। হাসপাতালের তরফেই ঠাকুরপুকুর থানায় খবর যায়। মিনিট দশেকের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিস। দেহটি উদ্ধার করা হয়। বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে ঠাকুরপুকুর থানার পুলিস। বুধবারই মৃতদেহের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বেহালা থানা এলাকার রাজা রামমোহন রায় রোডের বাসিন্দা রৌণক। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। বছর তিনেক আগে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়। এরপর থেকে চাকরি খুঁজতে শুরু করে যুবক। কিন্তু, মেলেনি চাকরি। পরিবার সূত্রে খবর, গত তিন বছরে প্রায় কুড়িটির বেশি ইন্টারভিউ দিয়েছেন রৌণক। কোনওক্ষেত্রেই চাকরির মুখ দেখতে পাননি ইঞ্জিনিয়ার। তার জেরেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। রৌণকের বাবা বিশ্বরঞ্জন ভট্ট পুলিসকে জানিয়েছেন, চাকরি না পাওয়ার জেরে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল ছেলে। পাশাপাশি, শিঁরদাড়া সমস্যাতেও ভুগতেন রৌণক। মাঝে মাঝেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত সে। বলত চাকরি খুঁজতে যাচ্ছি। আবার ফিরে আসত। কিন্তু, মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে কিছু না জানিয়েই বেরিয়ে যান রৌণক। রাত পর্যন্ত না ফেরায় বেহালা থানার দ্বারস্থ হয় পরিবার।
পুলিস সূত্রে খবর, বেহালার বাড়ির আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁকে পাড়া থেকে বের হতে দেখা যায়। কিন্তু, ফিরে আসেননি। বুধবার সকালে পুলিসেরই তরফেই ফোন করে পরিবারকে রৌণকের মৃত্যু খবর দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরেই জোকা ইএসআই হাসপাতালে প্রবেশ করেন রৌণক। সটান অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে উঠে যান তিনি। গোটা রাত সেখানেই ছিলেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, সকালেই মরণঝাঁপ দেন রৌণক। পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি থানায়। নিজস্ব চিত্র