• হোমিওপ্যাথি কমাচ্ছে কোভিড পরবর্তী ৮৫ শতাংশ উপসর্গ
    বর্তমান | ০৭ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০২২ সালে করোনা হয়েছিল নদীয়ার শান্তিরাম দাসের। বয়স বেশি নয়। চল্লিশের দোরগোড়ায়। কালের নিয়মে তিনি কোভিডমুক্ত হলেন ঠিকই, কিন্তু নীরোগ হতে পারলেন কই! করোনার সময় ঘুমের ব্যাঘাত হতে শুরু হয়। চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করেন, কোভিড যাক, ঠিক কমে যাবে। কমল কই! সরকারি চাকরিজীবী শান্তিরাম প্রমাদ গোনেন। সংসারী মানুষ। ঘুমটাই যদি নষ্ট হয়, কাজে মন দেবেন কী করে? সকাল থেকে যে রুটিনে বাঁধা জীবন। সবটাই মাটি হয়ে যাবে। যাচ্ছেও। চিকিৎসকের কাছে ফলো আপ করাতে গেলে তিনি বললেন, ‘ওষুধ দিচ্ছি। ঘুম ভালো হবে। আপনার স্ট্রেস লেভেলটাও বেড়ে গিয়েছে দেখছি। দুটোতেই উপকার পাবেন।’ 

    করোনা চলে গিয়েছে। কিন্তু নিজের ছাপ রেখে গিয়েছে শান্তিরামবাবুর মতো হাজার হাজার মানুষের শরীরে। কারও বুক ধড়ফড়, কারও অবসাদ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো কারও আবার থেকে গিয়েছে প্রচণ্ড ক্লান্তি, ঘুম না হওয়া। স্নায়ুবৈকল্য, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকও বেড়েছে পোস্ট কোভিড জীবনে। করোনা দু-তিন বছর আগে বিদায় নিলেও এখনও এইসব উপসর্গ যায়নি অসংখ্য মানুষের। ওষুধবিহীন জীবনে করোনা হওয়ার পর কতজনকে যে এক বা একাধিক ওষুধ ধরতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। এই পরিস্থিতিতে হোমিওপ্যাথি হতে পারে মুশকিল আসান—এমনটাই দাবি করছেন চিকিৎসকরা। ডি এন দে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পোস্ট কোভিড ৮৫ শতাংশ উপসর্গ কমিয়ে দিচ্ছে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। ১০ হোমিওপ্যাথের এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব ইন্টিগ্রেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে। 

    পোস্ট কোভিড কোন কোন উপসর্গ নিয়ে কাজ করেছেন চিকিৎসক গবেষকরা? সেগুলি হল, স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন বা চলে যাওয়া, টেনশনে, উৎকণ্ঠায় বা উদ্বেগে থাকা, সুস্থভাবে চিন্তা না করতে পারা বা কাজে মন বসাতে না পারা, অবসাদ, মাথা ঝিম ঝিম করা, ক্লান্তি, পেট বা জিআই সিস্টেমে সমস্যা, মাথা যন্ত্রণা, ভুলে যাওয়া, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা বা টান ধরা, নতুন অ্যালার্জি, সূচ ফোটানোর অনুভূতি, কাজের শেষে অবসন্নতা ও ঘুমের সমস্যা। 

    গবেষক দলের সদস্য ডি এন দে মেডিক্যাল কলেজের লেকচারার ডাঃ শুভ্রনীল সাহা, হোমিওপ্যাথির কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা সিসিআরএইচ-এর শিলিগুড়ির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডাঃ অভিজিৎ রানা প্রমুখ বলেন, পোস্ট করোনা রোগীদের দুটি গ্রুপে ভাগ করে একটি গ্রুপের রোগীদের আমরা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিয়েছি। অন্য গ্রুপের রোগীরা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ পাননি। 

    ২০২২ সালের ছ’মাস ধরে ডি এন দে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের ৬০ জন রোগীকে নিয়ে গবেষণাটি চলে। তাঁদের মধ্যে একটি গ্রুপের ৩০ জন রোগীকে দেওয়া হয় ন্যাট্রামমিওর, পালসেটিলা, রাসটাকস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, থুজা-সহ ২৫ ধরনের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ পাওয়া রোগীদের উপসর্গগুলি কমতে শুরু করে একমাস ওষুধ খাওয়ার পর থেকেই। অন্যতম গবেষক শুভ্রনীল বলেন, ‘কয়েকমাস পর আমরা দেখি, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাওয়া রোগীদের প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে পোস্ট করোনা বিভিন্ন উপসর্গই চলে গিয়েছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)