কলকাতা বইমেলায় এবার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন থাকবে তো? ধোঁয়াশায় গিল্ডও
আজ তক | ০৭ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata International Book Fair 2025: আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বইমেলা। শেষ হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। ১২ দিন ধরে চলবে বইয়ের উৎসব। বইমেলা প্রাঙ্গন অর্থাৎ করুণাময়ীর নির্দিষ্ট মেলা প্রাঙ্গণেই হবে বইমেলা। প্রতিবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ জানুয়ারি এই মেলার উদ্বোধন করবেন ৷ তবে এবারের বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ অক্টোবর মাস জুড়ে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। তাতে এখনও পর্যন্ত ১৩০০টি মতো আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু, লক্ষ্যনীয় বিষয় হল এবার বইমেলার জন্য বাংলাদেশের কোনও প্রকাশনা সংস্থার তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও আবেদনপত্র আসেনি। এমনকী বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকেও কোনও আবেদনপত্র আসেনি পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কাছে। গিল্ড সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে গিল্ডের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয় বইমেলায় অংশগ্রহন করার জন্য প্রকাশক, পুস্তক বিক্রেতা, লিটল ম্যাগাজিন বিভাগকে তাদের নিজস্ব লেটার হেডে দরখাস্ত করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে নাম, ঠিকানা, স্টল বা টেবিলের মাপ, মেলার সকল নিয়মবিধি মেনে চলার সম্মতিপত্র সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। দরখাস্ত জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। সূত্রের খবর, প্রায় এক হাজার তিনশ আবেদনপত্র জমা পড়েছে। গতবারের থেকে কিছুটা বেশি। এবার তার আশপাশেই থাকবে স্টলের সংখ্যা। তবে সূত্র মারফত জানা গেছে এবারের আবেদনের তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের প্রকাশকদের। এমনকী এও জানা গেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকেও এখনও পর্যন্ত কোনও আবেদনপত্র আসেনি পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিন্ডের কাছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ২০২৫ সালের বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন কি থাকছে না? তবে এই নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চান না গিল্ড কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পরেই আওয়ামী লিগ সরকারের পতন ঘটে। তারপরে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয় বাংলাদেশে। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন অন্তর্বর্তী সরকার চলছে। বাংলাদেশে পুরোপুরি শান্ত বলা যাবে না,এখনও বিক্ষিপ্তভাবে অশান্তি লেগেই আছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তরফে চিঠি না আসা পর্যন্ত কলকাতা বইমেলায় তাদের প্যাভিলিয়ন ‘অনিশ্চিত’ জায়গাতেই রয়েছে। তবুও এখনও বেশ কিছুদিন দেরি আছে বইমেলায়। তবে বাংলাদেশ ছাড়া আরও যেসব আবেদনপত্রগুলি এসেছে তা খুঁটিয়ে দেখে, আলাপ আলোচনা করে কোন প্রকাশক কোন স্টল পাবেন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৪৮ তম আন্তর্জাতিক বইমেলার এবার ১০৫০ টির আশেপাশে স্টল থাকবে বইমেলায়। সেই জায়গায় আবেদন পড়েছে ১৩০০টি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তরফে চিঠি না আসা পর্যন্ত কলকাতা বইমেলায় তাদের প্যাভিলিয়ন ‘অনিশ্চিত’ জায়গাতেই রয়েছে। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের কর্তা সুধাংশুশেখর দে জানান, এবারে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকেও আমাদের কাছে কোনও চিঠি আসেনি। ফলে বাংলাদেশ থেকে চিঠি না এলে বইমেলায় প্যাভিলিয়ন আদৌ হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে ২০১১ সাল থেকে কলকাতার বুকে শুরু হওয়া ‘বাংলাদেশ বইমেলা’র তাল কাটলো এ বছর। এবার হচ্ছে না বাংলাদেশ বইমেলা। কলকাতা বইমেলায় প্রতিবার বাংলাদেশের অংশগ্রহণের পাশাপাশি ২০১১ সাল থেকে শহরের বুকে আয়োজন হয়ে থাকে বাংলাদেশ বইমেলা। শুধু বাংলাদেশের বইয়ের পসরা নিয়ে সূচনালগ্নে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালার কক্ষে। তবে শুরু হলেও নির্দিষ্টস্থানে মেলাটিকে রাখা যায়নি। বারবার স্থান এবং সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। এরপর নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বর ঘুরে বাংলাদেশ বইমেলা হয়েছে রবীন্দ্রসদনের পশ্চিম পাশে মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে। মাঝে করোনার কারণে একবছর বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর ২০২২ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার বইপাড়ার কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কোয়ারে। কিন্তু এবছর তা হচ্ছে না।