সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বৃহস্পতিবার তিনি পা দিলেন ৩৭ বছরে। তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতির ময়দানে যাঁর উদয় আর বাংলা থেকে বাম শাসনের অস্তমিত হওয়ার সময় একই। ২০১১। পরবর্তী সময়কালের মধ্যে তিনবার সাংসদ হওয়াই কেবল নয়, বুদ্ধি ও সময়পোযোগী পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে রাজনীতিক অভিষেক ক্রমেই হয়ে উঠেছেন ঘাসফুল শিবিরের অন্যতম স্তম্ভ। যুবনেতা থেকে জনদরদী জননেতা। বাংলার ‘ইউথ আইকন’। মোদি-শাহর মতো নেতারাও এরাজ্যে এসে বার বার নিশানা করেছেন তাঁকে। যা বুঝিয়ে দেয় দিনে দিনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার তাঁর জন্মদিনের জনজোয়ার, ভক্তদের আকুতি বুঝিয়ে দিল নেতা হিসেবে কতটা আদর্শ হয়ে উঠতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য সেনাপতি।
এত অল্প সময়ে এত মানুষের আশীর্বাদধন্য হয়ে ওঠাটা সহজ ছিল না। মনে রাখতে হবে, তাঁর পড়াশোনা দিল্লির নামী প্রতিষ্ঠানে। ভারী ভারী ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি ঝুলিতে। চাইলে অনায়াসেই ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট জগতের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুনিয়ায় পা রাখতে পারতেন। কিন্তু সেই হাতছানি উপেক্ষা করেছেন অনায়াসেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় প্রবেশ রাজনীতির ময়দানে। ২০১১ সাল থেকেই সামলেছেন দলের যুব সংগঠনের দায়িত্ব। ২০১৪ সালে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। কলকাতার নিরাপদ আসন নয়, লড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার থেকে। প্রথমবারেই বাজিমাত। ৫ লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে জয়। তার পর ২০১৯। ফের ২০২৪। ডায়মন্ড হারবার মানুষ বার বার তাঁকেই নির্বাচিত করেছেন।
কেবল বাংলাই নয়, গেরুয়া শিবিরের ঘাঁটি গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলিতেও বিজেপিকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন। ঠান্ডা ঘরে বসে সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে এটা হয় না। রীতিমতো মাঠে নেমে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের সুফল অভিষেকের এই ধারাবাহিক সাফল্য। একজন জননেতা এভাবেই জনমানসে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলতে পারেন। করোনার সেই ক্রান্তিকাল স্মরণ করুন। গোটা বিশ্ব তখন মারণ জীবাণুর হামলায় জবুথবু। তার উপর চলছে লকডাউন। স্তব্ধ জনজীবন। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটানোই দায় আমজনতার। সেই সময় এক অন্য অভিষেককে দেখেছিল বাংলা। ডায়মন্ড হারবারের মানুষের মুখে খাবারের জোগান দিয়ে গিয়েছেন তিনি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত ডায়মন্ড হারবার মডেল প্রশংসা কুড়িয়েছিল সবার। নিজের সংসদীয় অঞ্চলের মানুষের অভাব-অভিযোগ জানতে পরবর্তী সময়ে চালু করেছেন ‘একডাকে অভিষেক’ পরিষেবা। এভাবেই ক্রমে উজ্জ্বল হয়েছে অভিষেকের মানবদরদী সত্তা। একটা ফোনকলেই অসুস্থ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া। কখনও এগিয়ে গিয়ে খোঁজ নেওয়া দুস্থদের। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’- এই কথাটিই যেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে তৈরি করে দিয়েছে এক অমোঘ বাতিঘর।
২০২৩ সালে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি অভিষেকের এক বিরাট সাফল্য। দৃশ্যতই যা এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। শারীরিক চাপ নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে জেলায় জেলায় ঘুরে দিনভর কর্মসূচি। এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগেও একটানা সফর করে গিয়েছেন তিনি। লাগাতার জনসভা করে কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র অভিযোগে সরব থাকা। পায়ে হেঁটে জনসংযোগ, সরাসরি কথা। তাঁকে ঘিরে মানুষের ভিড়, উচ্ছ্বাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমোহিনী মন্ত্রকে সামনে রেখেই এভাবে অভিষেক ক্রমে হয়ে উঠেছেন যোগ্য উত্তরসূরি।
বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় তাঁর জন্মদিন পালন, কালীঘাটের বাড়ির বাইরে জনসমুদ্র, একবার প্রিয় নেতাকে দেখার, ছোঁয়ার আকুতি বুঝিয়ে দেয় ক্রমেই নেতা হিসেবে কতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন তিনি। মাত্র তেরো বছরেই নবাগত থেকে হয়ে উঠেছেন নব্য প্রজন্মের মুখ। ৩৭তম জন্মদিন বুঝিয়ে দিয়ে গেল, আগামিদিনেও নতুন নতুন মাইলফলক তৈরি করবেন ‘ইউথ আইকন’ অভিষেক।