নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: যুবকের বস্তাবন্দির দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার কিনারা করে ফেলল পুলিস। বুধবার কাঁকরতলার যুবক শেখ ইনসান (৩৪)-এর দেহ উদ্ধার হয় একটি জলাশয়ে। প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিস বন্দনা বাগদি নামে এক মহিলাকে আটক করে। বন্দনার বিরুদ্ধে মৃত যুবকের পরিবারও আঙুল তুলেছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়, বিবাহ বহির্ভুত ত্রিকোণ প্রেমের কারণেই খুন হতে হয়েছে ইনসানকে। বন্দনার সঙ্গে তার প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। স্বভাবতই বন্দনার জীবনে দ্বিতীয় ব্যক্তির খোঁজ শুরু হয়। বিদ্যুৎ নামে গ্রামের এক যুবকের নাম সামনে আসে। পুলিস তাকেও আটক করে। দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, সোমবার ইনসানকে খুন করা হতে পারে। ওইদিন সে গোরুর ঘাস কাটার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আর ফিরে আসেনি। পড়শি গ্রামে বন্দনার বাড়ি। সম্ভবত সেখানেই গিয়েছিল সে। ঘটনাচক্রে বিদ্যুৎও বন্দনার বাড়িতে ওই সময় হাজির ছিল। তাকে দেখে বেজায় চটে যায় ইনসান। দু’জন বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তার পরেই পথের কাঁটা পুরোপুরি উপড়ে ফেলতে ইনসানকে খুন করে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বন্দনার ভূমিকা কতখানি, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। পাশাপাশি, ইনসানকে হত্যার পিছনে বিদ্যুৎ-বন্দনার পূর্ব পরিকল্পনা থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। দু’জনের কেউই অবশ্য এখনও সেভাবে মুখ খোলেনি। বৃহস্পতিবার তাদের দুবরাজপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক দু’জনকে সাতদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, ধৃতদের ম্যারাথন জেরা করা হবে। তাতেই প্রকৃত সত্য উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কাঁকরতলার ঘটনা নিয়ে গত ১৫ দিনের মধ্যে বীরভূম জেলায় তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে ত্রিকোণ প্রেমের তত্ত্ব উঠে আসছে। অর্থাৎ, নারীঘটিত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, তা স্পষ্ট। গত ২৫ অক্টোবর মহম্মদবাজারে শ্যুটআউটে মৃত্যু হয় সুজয় মণ্ডল নামের এক যুবক। অভিযোগ ওঠে তার বন্ধু সন্দীপ মাহারার বিরুদ্ধে। এই খুনের নেপথ্যেও এক তরুণী। মুর্শিদাবাদের হরিহরপুরের এক যুবতীর সঙ্গে প্রেম চলছিল সুজয়ের। মাঝে কয়েকমাস জেল খাটে সে। সেই সুযোগে ওই যুবতীর প্রেমে মজে যায় সুজয়ের বন্ধু সন্দীপ। জেল থেকে বেরিয়েই সুজয়কে চিরতরে সরিয়ে দেয় সন্দীপ। বোলপুরের কঙ্গকালীতলা পঞ্চায়েতে সদস্য সমীর থান্ডারকে (৪৬) পিটিয়ে খুনের ঘটনাতেও পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগ উঠছে। সিউড়ি সদর হাসপাতালের মনোবিদ চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, ‘মনস্তত্ব অনুযায়ী ভালোবাসা একটা অনুভূতি। অতিরিক্ত নিউরো হরমোন নিঃস্বরনের জন্য দৈহিক প্রেম বাড়ে। তখনই একাধিক সম্পর্কে অনেকেই জড়িয়ে পড়েন। তার পরেই একে অপরের বিরুদ্ধে রেষারেষি শুরু হয়। তার থেকে অপরাধ ঘটিয়ে ফেলে।’
কাঁকরতলায় ইনসানের বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধারের ঘটনাতেও মোটিভ একই। গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত বন্দনার স্বামী মারা গিয়েছেন ক’বছর আগে। তারপর ইনসানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। ইনসানের স্ত্রীও এই সম্পর্কের কথা সম্ভবত জানতেন। এর মধ্যেই বন্দনার জীবনে এসে পড়ে বিদ্যুৎ। নতুন প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে। ঘটনার দিন বন্দনার বাড়ি গেলে দু’জনের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলে ইনসান। তা নিয়েই মূলত গোলমালের সূত্রপাত। এবং খুনের মতো অপরাধ ঘটিয়ে ফেলা। ইনসানের মৃত্যুর পর দেহটি বস্তায় পুরে তাতে ইট ভরে জলে ফেলে দেওয়া হয়। যাতে ঘটনাটি প্রকাশ্যে না আসে। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি।