• কালো স্করপিও নিয়ে শহরে ঘুরছে ‘সিবিআই’ গ্যাং, ১৫ দিনে দু’বারে ৫০ লক্ষ টাকা লুট
    বর্তমান | ০৮ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ব্যবসার মোটা টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা করতে যাচ্ছেন? আচমকা রাস্তা আটকে দাঁড়াচ্ছে কালো স্করপিও গাড়ি। স্যুট-বুট পরে নেমে আসছেন জনা চারেক ‘সিবিআই অফিসার’। হাওলার টাকা পাচার হচ্ছে এই বলে গাড়িতে তুলে নেওয়া হচ্ছে ব্যক্তিকে। আবার কোথাও সরাসরি দোকানে হানা দিচ্ছে তারা। ‘সিবিআই রেইড’ এর নাম করে আস্ত দোকান লুট করে চম্পট দিচ্ছে ‘অফিসাররা’। 

    পোস্তার পর ওয়াটগঞ্জ। ১৫ দিনের মধ্যে খাস কলকাতায় পরপর দু’বার। একই ধাঁচে সিবিআই অফিসার পরিচয়ে দিয়ে নয়া গ্যাংয়ের লুটে চিন্তায় লালবাজার। দু’টি ক্ষেত্রেই এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি কলকাতা পুলিস। সূত্রের খবর, পোস্তা ও ওয়াটগঞ্জ এলাকার দু’টি লুটের ক্ষেত্রেই হাওলার টাকা খোয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে লুট হওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। স্থানীয় থানার পাশাপাশি ঘটনাগুলির তদন্তে নেমেছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের হাতে এসেছে বেশ কিছু তথ্য। দু’টি ক্ষেত্রেই চারজন করে দুষ্কৃতী ছিল গাড়িতে। প্রত্যেকেরই চোখে কালো চশমা। সিসি ক্যামেরাতে তা দেখা গিয়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা কি একই গ্যাংয়ের? চোখে কালো চশমা থাকার জেরে তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিস। 

    কলকাতা পুলিস সূত্রে খবর, দুর্গাপুজোর পরপরই পোস্তা থানা এলাকার একটি স্বর্ণ বিপণিতে হানা দেয় ‘সিবিআই’ গ্যাং। বেআইনি টাকার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে— এই বলে দোকান থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। এরপরে ফের ওয়াটগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কর্মীকে ব্যাগ সমেত স্করপিও গাড়িতে তুলে নেয় সিবিআই পরিচয় দেওয়া গ্যাং। ই এম বাইপাসে নামিয়ে দেওয়া হয় ওই কর্মীকে। ১০ লক্ষ টাকা ভর্তি তাঁর ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় ‘সিবিআই’। দু’টি ঘটনার তদন্তে মিল পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দু’টি ঘটনাতেই লুট হওয়া ব্যবসায়ীরা হাওলা কারবারির সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ, লুটের ঘটনায় কালো টাকা জড়িত। সাধারণত এই টাকা খোয়া গেলে প্রতারিতরা বিশেষ একটা  থানার দ্বারস্থ হন না। সেই সুযোগকেই পুরোদমে কাজে লাগাচ্ছে গ্যাংয়ের সদস্যরা। 

    তাহলে কি হাওলা কারবারিরাই টার্গেট সিবিআই গ্যাংয়ের? লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে খবর, পোস্তা, বড়বাজার এলাকায় হাওলার টাকা লেনদেন হয়। বেশিরভাগটাই এই দুই থানা এলাকায়। কিছুটা বন্দর এলাকাতেও হয়ে থাকে। তাই এই দুই জায়গার ব্যবসায়ীরাই মূল টার্গেট। তদন্তকারীদের অনুমান, প্রত্যক্ষ্যভাবে সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে তিন-চার জন মিলে লুট চালাচ্ছে। তবে নেপথ্যে শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এজেন্টরা। এদের কাজ ক্রেতা বা ডিস্ট্রিবিউটার সেজে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভাব জমানো। তাঁদের ব্যবসার টাকা কোথায়, কখন, কীভাবে যায়— এইসব তথ্য সংগ্রহ করে এজেন্টরা। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই টার্গেট ‘ফিক্সড’ হয়। তারপরই অ্যাকশন!
  • Link to this news (বর্তমান)