সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরের পুরনো জগদ্ধাত্রীপুজোর মধ্যে অন্যতম তাঁতিপাড়া বারোয়ারির পুজো। এখানে দেবী ‘বড়মা’ নামেই খ্যাত। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী শিউলি ফুলের বৃন্তের রঙের প্রতিমা গড়া হয়। ২৫৭বছরের পুরনো তাঁতিপাড়ার বড়মার পুজো ঘিরে অনেক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
এই এলাকায় একসময় তাঁতিদের বাস ছিল। তাঁরা এলাকায় জগদ্ধাত্রীপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। রাজার অনুমতি পেয়ে পুজো শুরু হয়। এরপর দীর্ঘদিন এখানকার প্রতিমা দেখতে অন্যান্য প্রতিমার মতোই হতো। একদিন পুজো উদ্যোক্তাদের একজন দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তাতে দেবী নির্দেশ দেন, প্রতিমার রঙ শিউলি ফুলের বৃন্তের মতো করতে হবে। এরপর থেকেই সেই রঙের প্রতিমা গড়া হয়। লালচে রঙের প্রতিমা গড়ায় তাঁতিপাড়ার বড়মাকে অনেকে ‘লাল ঠাকুর’ও বলেন। মুকুট পরালে দেবীপ্রতিমার উচ্চতা ১৪ফুট হয়ে যায়। শহরের পাশাপাশি বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা এই প্রতিমা দেখতে আসেন। জাগ্রত দেবী হিসেবে খ্যাতি থাকায় বহু মানুষ মানত করেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে পুজোর পাশাপাশি দেবীকে সোনার গয়নাও দেন। ভক্তরা জানান, অসুখ ও সমস্যায় পড়া মানুষ দেবীকে স্মরণ করলে তিনি রক্ষা করেন।
দেবীর ভোগে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, লুচি, সুজি, ফল, পায়েস ও মিষ্টি দেওয়া হয়। দশমীতে চিঁড়ে, দই দেওয়া হয়। এই ভোগ সাধারণ মানুষ পান। একদিনেই পুজো হয়। তারপরও ভক্ত ও দর্শনার্থীরা লাইন দিয়ে পুজো মণ্ডপে প্রবেশ করেন। প্রতিমা দেখার পাশাপাশি প্রসাদ খান।
এবার পুরুলিয়ার একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়া হয়েছে। বড়মার পুজোর সময় এলাকার যেসব বাড়ির সদস্যরা বাইরে থাকেন, তাঁরাও ঘরে ফিরে আসেন। বিবাহিত মহিলারা বাপের বাড়ি চলে আসেন।
তাঁতিপাড়ায় এখন তন্তুবায় ছাড়াও অন্য অনেক সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে থাকেন। সবাই মিলে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজো কমিটির তরফে বিমলকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুমতি নিয়ে আমাদের পূর্বসূরীরা এই পুজো শুরু করেছিলেন। তাঁতিরা শুরু করলেও এখন সবাই পুজোয় অংশ নেন। সমস্ত প্রাচীন রীতি মেনে বৈষ্ণব মতে পুজো করা হয়।