ভিনরাজ্যে মৃত্যু হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের দেহ ফেরাতে হেনস্তা
বর্তমান | ০৯ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এবার কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হওয়া শ্রমিকদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে নানাভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠছে সেখানকার প্রশাসনের বিরুদ্ধে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শ্রমিকের বাবা-মা পৌঁছলে তবেই দেহ হস্তান্তর করা হবে বলে অনড় থাকছে ওই রাজ্যের প্রশাসন। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলির দাবি, বাঙালিদের বাংলাদেশি ভাবার কারণেই দেহ নিতে বাবা-মাকে হাজির থাকার কথা বলা হচ্ছে। যা বাংলার শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বাংলার বেশ কয়েকজন শ্রমিক মারা গিয়েছেন। এরমধ্যে মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের কয়েকজন শ্রমিকের দেহ পেতে পরিবারগুলির দম বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। প্রায় তিনমাস আগে ভগবনগোলার এক শ্রমিক তামিলনাড়ুর কেরাতপুর থানা এলাকায় কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার প্রশাসন দাবি করে, বাড়ি থেকে বাবা-মা ও উপযুক্ত কাগজপত্র নিয়ে এলে তবেই দেহ ছাড়া হবে। একই ঘটনা, রাজস্থানেও হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে তারাপীঠ এলাকার এক যুবক কাজ করতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু সেখানকার প্রশাসন কোনওভাবেই দেহ বাড়ি পাঠায়নি। কয়েকদিন পর বাড়ি থেকে মৃতের দাদা গিয়ে দেহ বাড়ি নিয়ে আসেন। এরকম পর পর বেশ কয়েকটি ঘটনাতে ভিন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের বাংলাদেশি ভাবার মনোভাব প্রকট হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রে কাজে গিয়ে খুন হওয়া নলহাটির বাসিন্দা সোমনাথ দেবনাথের ক্ষেত্রেও তাঁর পরিবারকে একইরকমভাবে হেনস্তা করা হয় বলে। কিন্তু আগে এমন হতো না। আগে কোনও শ্রমিক মারা যাওয়ার পর সেখানকার পুলিস ময়নাতদন্ত করে ও পরিচয়পত্র যাচাই করে। তারপর মৃতের থানায় সেই রিপোর্ট মেল করে যাচাই করতে বলবে। লোকাল পুলিস পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলে পঞ্চায়েত থেকে কিছু নথি নিয়ে কে দেহ নেবে তা উল্লেখ করে ফের মেল করে দিলেই দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু ইদানিংকালে তা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ রিপন বলেন, ভিনরাজ্যে বাঙালিদের বাংলাতে কথা বললেই মনে করছে বাংলাদেশি। ভাবছে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে সেখানে কাজ করছে। এটা তো বাঙালিদের উপর খুবই অন্যায় হচ্ছে। গরিব পরিবারগুলি মৃত্যুর খবর শুনে শোকার্ত থাকে। তারপর ওই অল্প সময়ে টাকা জোগাড় করে টিকিট কাটতে হবে। এগুলি বাবা-মায়ের পক্ষে ওই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। যে কোম্পানির হয়ে কাজে যাচ্ছে তাদেরই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এগুলি। কিন্তু বাংলার শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব বিষয়টি যেন খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। বিশেষ করে মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের শ্রমিকদের প্রতি এই ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, এই নিয়ে সংসদে বিষয়টি তুলব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককেও জানাব। বাংলার শ্রমিকদের স্বার্থে আমরা কাজ করছি। এই ব্যবহার মেনে নেব না।