সংবাদদাতা, দিনহাটা: মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিন গুজরান হয় কাশীকান্ত বর্মনের। পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরি তাঁর ঘর। শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়েছে টিনের চাল। তার জেরে বৃষ্টি হলেই জল ঢুকে পড়ে ঘরে। তবে ১৯৯২ সাল থেকে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করছেন তিনি। সেই আন্দোলনের নেশা থেকে তাঁর রাজনীতিতে যোগ। ২০২১ সালে প্রার্থী হয়েছিলেন সিতাই বিধানসভায়। এবারে উপ নির্বাচনে কামতাপুর ইউনাইটেডের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাশীকান্ত। স্ত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পান। মাস শেষে ওই ১২০০ টাকা দিয়ে সংসার চলে যায়। যদি দু’একশ টাকা বাঁচে, সেই টাকাও স্বামীর প্রচারে দিচ্ছেন স্ত্রী। সেই টাকায় প্রচার করছেন।
এবারের উপ নির্বাচনে সবচেয়ে গরিব প্রার্থী তিনি। দলের তরফে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকায় মানুষের কাছে দলের আদর্শ প্রচার করছেন তিনি। ফ্লেক্স-ফেস্টুন ছাপানোর টাকা নেই, পরিচিতরাই প্রচার করেন তাঁর হয়ে। সেই প্রচারেই যেটুকু ভোট মিলবে তাতেই খুশি কাশীকান্ত। নির্বাচনী প্রতীক পেয়েছেন পালতোলা নৌকা। সেই নৌকা চালাচ্ছেন মাঝি।
এবার ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল না তাঁর। দলের নেতারা আবদার করেছেন। সেই জন্যই সৈনিক হিসেবে তাঁর ভোটে দাঁড়ানো। প্রচার চালানোর জন্য টাকা নেই। বিধানসভাজুড়ে ঘোরার টাকাও নেই। কখনও কখনও দুই একশ টাকা হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন কেউ। সেই টাকা নিয়ে এদিকে ওদিকে ঘুরছেন তিনি। কাশীকান্তের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগেই। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ছেলেরা ভিনরাজ্যে কাজ করছে। সংসার চালানোর জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হয়।
কাশীকান্তবাবু বলেন, নিয়তির দোষেই এই অবস্থা আমাদের। সংসার চালাতে মানুষের জমিতে কাজ করতে হয়। পার্টির লোকেদের আবদারের জন্য ভোটে দাঁড়িয়েছি। ওরা প্রচারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকাই সম্বল। পাটকাঠির ঘেরা ঘর। টিনের চালে ফুটো হওয়ায় বৃষ্টিতে জল পড়ে। পরিচিতরা টাকা দেন। সেই টাকায় প্রচার করি। স্ত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পান। সেই টাকা থেকে কিছু বাঁচলে প্রচারের কাজে লাগাই।