• চন্দননগর: কাঁথাশিল্প থেকে ৪০ ফুটের ঝাড়বাতি, জগদ্ধাত্রীর মণ্ডপে চোখ ধাঁধানো সাজ
    বর্তমান | ০৯ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: সমস্ত মণ্ডপে পৌরাণিক প্রতিমা কিন্তু তারপরও আছে থিমের বাহার। এই অনবদ্য যুগলবন্দিই চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম সেরা আকর্ষণ। চন্দননগরের বিখ্যাত আলোকসজ্জার মূল ঝলক দেখা যায় শোভাযাত্রার রাতে অর্থাৎ দশমীর রাতে। কিন্তু ষষ্ঠী থেকে নবমী দর্শকদের মাতিয়ে রাখে প্রতিমা আর মণ্ডপসজ্জার রকমফের। চন্দননগরে অনেক আগেই এসেছে থিম। সময় গড়ানোর সঙ্গে থিম হয়েছে আধুনিক থেকে উত্তর আধুনিক। কিন্তু বদল আসেনি দীর্ঘ মনোহর সাজে সজ্জিত প্রতিমা আর মণ্ডপসজ্জার অভিনব ঐকতানে।


    চন্দননগরের অন্যতম পুরনো পুজো উত্তরাঞ্চল সর্বজনীনের এবারের থিম, ‘রত্নগর্ভা’। মূলত নারীশক্তিকে সামনে রেখে থিমের বাহারি পসরা সাজিয়েছে উত্তরাঞ্চল। আছে চমকপ্রদ নানা উপাদান। নারী শুধু রত্নগর্ভাই নয়, নারী নিজেও রত্ন। মণ্ডপসজ্জায় তাই রয়েছেন, মাতঙ্গিনী হাজরা থেকে এ কালের মনু ভাকের। ভারতবর্ষ থেকে বাংলার রত্ন সমতুল্য নারীদের  মনোহর অবয়বের কোলাজে সেজেছে মণ্ডপ। তা নির্মাণ করা হয়েছে কাঁথাস্টিচের আদলে। কাঁথা স্টিচ শুধু বাংলার খ্যাত কুটিরশিল্পই নয় তা তৈরিতে নারীর প্রশ্নহীন দক্ষতার প্রয়োজন। নারী শক্তির নানা উপাদান এভাবে মিলিয়ে দেওয়ার পরে মণ্ডপের মুখেই রাখা হয়েছে রাজা রামমোহনের অবয়ব।  আর আছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ক্লাব কর্তা মোহিত নন্দী বলেন, ‘নারীর শিক্ষার অধিকার থেকে সমাজে প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা।  নারীশক্তির  উৎসবের মঞ্চে তাই তাঁদেরও রাখা হয়েছে।’  রামমোহনের অবয়ব তৈরি হয়েছে বাঁশের চাঁচর দিয়ে। উত্তরাঞ্চলের প্রতিমা সেজেছে জরি, চুমকি আর রাংতার মোড়কে। মণ্ডপে যাওয়ার পথে দু’ধারের দীর্ঘ এলাকা চন্দননগরের নিজস্ব আলোর রোশনাইতে সেজে উঠেছে।


    ১৯০ বছরে পা দিয়েছে চন্দননগরের অন্যতম পুরনো পুজো বাগবাজার সর্বজনীন। বাগবাজারের প্রতিমা সাবেক ধাঁচে তৈরি। প্রতিমার শরীরজুড়ে ছড়িয়ে সোলার সাজ।  সে সাজেও সাবেকিয়ানার ছোঁয়া। তাই কোনও থিম নেই। তবে আছে শিল্পীর অনবদ্য শিল্প সুষমা। সাজ সহ প্রায় ৩১ ফুটের প্রতিমা দৃষ্টিনন্দন। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, গোটা চন্দননগরে একমাত্র তাদের প্রতিমার মুখাবয়বই হাতে গড়ে তোলা। সর্বত্র সাবেক রীতি রেওয়াজের মধ্যে আছে থিমও। বাগবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরির জায়গা খুব ছোট।  যদিও ‘লক্ষ্মী’র উপস্থিতিতে সেই ছোট্ট পরিসর হয়ে উঠেছে নিখুঁত স্বর্গ। বাগবাজার লক্ষী মূর্তি থেকে তাঁর পায়ের ছাপ, পেঁচা সহ  যাবতীয় অনুষঙ্গকে তুলে এনেছে মণ্ডপসজ্জায়। আর্ট থেকে মডেলের মাধ‍্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপের বাহারি সাজ। আর আছে  আলোর ঝাড়।  ক্লাব কর্তা সুনীলকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জগদ্ধাত্রী পুজোয় আমাদের মণ্ডপে চল্লিশ ফুটের ঝাড়বাতি ব্যবহার করা হয়।  সেই ঝাড়বাতিও দেখার মতো। এখানে দেবীর রূপ মনোহর।’
  • Link to this news (বর্তমান)