না থেকেও ‘হাজির’ হাজি নুরুল! নেই সন্দেশখালি ‘কাঁটা’, কেমন হবে হাড়োয়া উপনির্বাচনের লড়াই?
প্রতিদিন | ০৯ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: না থেকেও তিনি যেন রয়েছেন সর্বত্র। তাঁর নাম, কাজ, মস্তিষ্ক, সংগঠন ? এসবই উপনির্বাচনে পুঁজি শাসক শিবিরের। সন্দেশখালি ‘কাঁটা’ উপড়ে ঘাসফুলের পথ প্রায় মসৃণ। গেরুয়া শিবিরকে পিছনে ফেলে কিছুটা উত্থান হতে পারে আইএসএফের। আর সরাসরি লড়াইয়ে নেই বামেরা। সবমিলিয়ে, হাড়োয়ার উপনির্বাচন খানিকটা একপেশে হতে চলেছে। এমনই শোনা যাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত লাগোয়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রের আনাচে-কানাচে। আগামী ১৩ নভেম্বর কেমন হবে উপনির্বাচনী লড়াই? এই প্রতিবেদনে রইল তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা।
২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া, বসিরহাট, সন্দেশখালি, হাসনাবাদের মতো বহু এলাকায় যে দ্রুত ঘাসফুলের বিস্তার ঘটেছে, তা নয়। বরং খানিকটা লাল দুর্গ ছিল। আর পদ্মের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়নি কখনও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ, পরিস্থিতি বদলেছে। ধীরে ধীরে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের দখলে এসেছে এসব এলাকা। ভৌগলিক দিক থেকে হাড়োয়ার অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের গা ঘেঁষা গ্রামীণ এলাকা মূলত নদীবেষ্টিত। ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায়। সেগুলি হল ?
ফলতি-বেলিয়াঘাটা
কীর্তিপুর ১
কীর্তিপুর ২
দাদপুর
শাসন
চাঁপাতলা
হাদিপুর-ঝিকরা ২
দেগঙ্গা ১
দেগঙ্গা ২
গোপালপুর ১
গোপালপুর ২
হাড়োয়া
খাসবালান্দা
ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ১০৩। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এখান থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের হাজি নুরুল ইসলাম। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁকেই তৃণমূল বসিরহাট কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে। জিতেও যান হাজি নুরুল। ফলে বিধায়কশূন্য হয়ে পড়ে হাড়োয়া। অন্যদিকে, সাংসদ হিসেবে আর কাজ করা হয় না হাজি নুরুলের। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের কয়েকদিন পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
সেই হাড়োয়া বিধানসভায় এবারের উপনির্বাচনে হাজি নুরুলেরই অশরীরী উপস্থিতি যেন। এখানকার তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুলের দ্বিতীয় পুত্র রবিউল ইসলাম। এনিয়ে পরিবারের কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকলেও তা কাটিয়ে অবশেষে রবিউল পেয়েছেন দলের টিকিট। বাবার গড় রক্ষার প্রধান ভার তাঁর উপর। রবিউলের হয়ে স্থানীয় তৃণমূলের প্রায় সব শীর্ষ নেতাই প্রচার করছেন। একুশে হাজি নুরুল জিতেছিলেন প্রায় ৮১ হাজার ভোটে। আর চব্বিশের লোকসভা ভোটে হাড়োয়া বিধানসভা থেকে তিনি এগিয়ে ছিলেন ১ লক্ষ ১১ হাজার ভোটে। রবিউলের লক্ষ্য, সেই ব্যবধান আরও বাড়ানো। ওয়াকিবহাল মহলের মত, বাবার নামেই ভোট পেয়ে যাবেন রবিউল। তাই তাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত।
দ্বিতীয় স্থানে থাকতে পারে নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ। সংখ্যালঘু এলাকা থেকে কিছু ভোট তারা পাবে। এখানে আইএসএফের প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম গাজি। তাকেই সমর্থন দিচ্ছে বামেরা। সিপিএম বা অন্য কোনও বাম দলের কোনও প্রার্থী নেই। একুশের ভোটেও আইএসএফ এখানে দ্বিতীয় হয়েছিল। আর কংগ্রেস প্রার্থী হাবিব রেজা চৌধুরী কিংবা বিজেপির বিমল দাস নামমাত্র প্রার্থী হলেও উপনির্বাচনের লড়াইয়ে সেভাবে ছাপ রাখতে পারবেন না বলেই মত বিশ্লেষকদের।
বিশেষত বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধস নামার বড় কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং সন্দেশখালির মতো স্পর্শকাতর রাজনৈতিক ইস্যুকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়া। বরং সন্দেশখালির ঘটনাকে বিজেপি যে পথে চালিত করতে চেয়েছে, তাতে তৃণমূল বিরোধিতা দূর, নিজেরাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। চব্বিশের নির্বাচনে বসিরহাটে রেকর্ড ব্যবধানে হাজি নুরুলের জয়ই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ফলে জয় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে নিজেদের ভোটের ঝুলি পূর্ণ করা নিয়ে তেমন ভাবিত নয় তৃণমূল। এখন দেখার, ১৩ নভেম্বর ভোটের দিন হাড়োয়ার সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি কেমন থাকে।