মুখবদলের পরিকল্পনা হলেও তার রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি তৃণমূল। কিন্তু সেই পরিকল্পনার ঘোষণার সূত্রেই শাসক দলের অন্দরে নতুন করে কোন্দলের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, পছন্দ মতো বদলের লক্ষ্যে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত, পুরসভা ও সংগঠন নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সেই মতোই নিজের নিজের গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের নামের তালিকায় আসতে শুরু করেছে তৃণমূল ভবনে। একই ভাবে সেই প্রস্তাবিত তালিকা যাচ্ছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের দফতরেও। নীচের তলায় শুরু এই তৎপরতায় গোষ্ঠী-কোন্দলের সূচনা হয়েছে একাধিক জেলায়। ক্ষমতাসীন অংশের বদল চেয়ে নানা তথ্য ছড়াচ্ছে সমাজমাধ্যমেও। জেলা থেকে আসা এই সব চিঠির ভবিষ্যৎ যা-ই হোক না কেন, গোষ্ঠী-পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন দলের নেতারা।
স্থানীয় প্রশাসনের পরেই দলীয় নেতৃত্বেও এই রবদলের প্রস্তাব রয়েছে তৃণমূলে। আগামী বিধানসভা ভোটের আগে একাধিক জেলা সভাপতি বদল করার কথাও ভাবা হয়েছে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটে শহারঞ্চলে যে ধাক্কা এসেছে, তাতে পুরসভায় মুখবদলের এই প্রক্রিয়া অনিবার্য। তা করতে না-পারলে মানুষের আস্থা ফিরবে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগেও আমরা মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তাও কার্যকর করতে হবে।’’ কিন্তু দলের অন্য একাংশ মনে করছে, এত পদে রদবদলে যে ‘বিদ্রোহ’ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। তবে তা হলেও এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করতে অভিষেক অনড়। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভোটের ফলের নিরিখে তাঁর রদবদলের প্রস্তাব তৃণমূল নেত্রীর বিবেচনায় রয়েছে।
লোকসভা ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় মুখবদলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। সেই হিসেবে ৭৪টি পুরসভা চিহ্নিত করা হলেও বদলের সিদ্ধান্তে মমতা এখনও ‘সিলমোহর’ দেননি। শীর্ষ স্তরের এই টানাপড়েনের মধ্যে জেলা স্তরের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলীয় সূত্রে খবর, জেলা সভাপতি, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের পাঠানো এই সব সুপারিশে গোষ্ঠী-রাজনীতি স্পষ্ট। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘সুপারিশের থেকেও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্থানীয় স্তরে ক্ষমতার জন্য সক্রিয়তা। যেখানে যে ক্ষমতার বাইরে আছেন, তিনি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।’’ ওই নেতার মতে, ‘‘বছর দেড়েকের মাথায় বিধানসভা ভোট। তার আগেই গোষ্ঠী-রাজনীতির এই টানাটানি এড়িয়ে মসৃণ ভাবে বিষয়টি সেরে ফেলা দরকার।’’