যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা যদি নিয়ম মেনে চলতেন, তাহলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা ঘটত না। এমনই জানানো হল কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির চূড়ান্ত রিপোর্টে। গত ১৭ জুন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছাড়ার পরে নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মেরেছিল একটি মালগাড়ি। প্রাথমিকভাবে মালগাড়ির চালক এবং সহকারী চালকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে দায় সেরেছিলেন রেলের শীর্ষ কর্তারা। যদিও সিআরএসের রিপোর্টে চালক এবং সহকারী চালককে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। বরং সার্বিক গাফিলতির কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সিআরএসের রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
সিআরএসের চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, অটোমেটিক সিগন্যাল যখন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, সেইসময় ট্রেন পরিচালনার একাধিক ক্ষেত্রে গাফিলতি ছিল। রাঙাপানি স্টেশনে যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী এবং অফিসার ছিলেন, তাঁরা ওই দুর্ঘটনার অংশটি পেরোনোর জন্য মালগাড়ির চালককে ঠিকমতো অনুমোদনপত্র দেননি। নির্দিষ্ট গতির মধ্যে যাতে মালগাড়ির চালক ট্রেন চালান, সেটা নিয়ে ঠিকমতো সতর্ক করেননি।
ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মালগাড়ি চালককে যে পেপার সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল, তাতে তিনি মনে করেছিলেন যে ওই অংশে যে গতিতে যাওয়া যায়, সেই গতিতেই ট্রেন চালানো যাবে। ঢিমেগতিতে যে ট্রেন চালাতে হবে, সেটা বুঝতে পারেননি। অটোমেটিক সিগন্যাল কাজ না করলেও কোনওরকম সতর্কতাবার্তা দেওয়া হয়নি। আর সেটার ফলস্বরূপই দ্রুতগতিতে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মেরেছিল মালগাড়ি। ব্রেক কষেও লাভ হয়নি।
তারপর সেই দুর্ঘটনার তদন্ত করে দেখেছে সিআরএস। তদন্ত প্রক্রিয়ার সময় একাধিক রেলকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খতিয়ে দেখা হয় বিভিন্ন দিক। আর সেইসবের ভিত্তিতে সিআরএস যে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে জানানো হয়েছে যে ট্রেনের চালক, স্টেশনের কর্মীদের ঠিকমতো কাউন্সেলিং করা হয়নি। আর সেই সার্বিক গাফিলতির কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবকিছু নিয়ম মেনে হলে ‘এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত’ বলে সিআরএসের চূড়ান্ত রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
সিআরএসের চূড়ান্ত রিপোর্টে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার জন্য নিউ জলপাইগুড়ির লোকো ইনস্পেক্টর, রাঙাপানি স্টেশনের কর্মী এবং ট্র্যাফিক ইনস্পেক্টরদের দায়ি করা হয়েছে। যে দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ৪০ জনের বেশি।