মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: সাতসকালে শালিমার-সেকেন্দ্রবাদ এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা নিয়ে বাড়ল ধোঁয়াশা। ডাউন লাইনে ট্রেনটি যাওয়ার কথা। সেইমতো ঘোষণাও হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বও তা মিডল লাইনে ঢুকে গেল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এখন মাথা ঘামাতে হচ্ছে রেল কর্তাদের। দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খড়গপুর ডিভিশনের জিএম অনিল মিশ্র। ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, শনিবার সকালে ট্রেনটি সেকেন্দ্রাবাদ থেকে শালিমারে দিকে আসছিল। হাওড়ার নলপুরের আগের স্টেশন বাউরিয়া থেকে ট্রেনটি এক নম্বর লাইনে যাওয়ার সিগন্যাল পায়। নলপুর স্টেশনেও ঘোষণা করা হয়, এক নম্বর লাইন দিয়ে থ্রু ট্রেন যাবে। টেনটি নলপুর স্টেশনে ঢোকার আগে ক্রসিংয়ের কাছে লাইনচ্যুত হয়। দেখা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিন রয়েছে পাশের ডাউন লাইনে। ইঞ্জিনের পিছনেই পার্সেল ভ্যান এবং তার পিছনের মোটর ভ্যান ছিল। পার্সেল ভ্যানটি ডাউন ও মিডল লাইনের মাঝামাঝি চলে এসেছে। মোটর ভ্যানটি লাইনচ্যুত অবস্থায় রয়েছে মিডল লাইনের উপরে। চারটি কামরাও রয়েছে মিডল লাইনে। দুটি কামরা আবার মিডল ও ডাউন লাইনে রয়েছে। এর পরে পিছনের দিকের কামরাগুলিও ডাউন লাইনে রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবে রহস্য দানা বাঁধছে, কীভাবে এমনটা ঘটল। রেলের কর্তাদের প্রাথমিক বক্তব্য, ইঞ্জিনের সঙ্গে ট্রেনের কামরাগুলি ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু তার পরই সেসব কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। স্লিপারের উপর দিয়ে ঘষতে ঘষতে আসায় এক নম্বর লাইনের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেনড্রল ক্লিপ ভেঙে গিয়েছে, কোথাও তা খুলে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০০ মিটারের বেশি ডাউন লাইন। প্রশ্ন উঠছে, এক নম্বর লাইনে ইঞ্জিন থাকা সত্ত্বেও কিভাবে বাকি ছটি কামরা আপ লাইনে চলে এল। তাহলে কি ক্রসিংয়ের মুখ দু নম্বর লাইনের দিকে ঘোরানো ছিল? যে কারণে ইঞ্জিনটি ক্রসিং পেরিয়ে এক লাইনেই থাকতে পারলেও বাকি ক্যামেরাগুলো ডাউন লাইনে আসতে না পেরে মিডল লাইনে চলে আসে এবং পার্সল কামরাটি ডাউন ও মিডল লাইনের মাঝ দিয়ে ঘষটে ঘষটে আসে। ফলে ডাউন লাইনের স্লিপার পেনড্রল ক্লিপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার একাংশের বক্তব্য, যদি ইঞ্জিন-সহ গোটা ট্রেনটাই সিগন্যাল ভুল করে বা ক্রসিং দিয়ে মিডল লাইনে চলে আসে, তাহলে ফের ইঞ্জিন ডাউন লাইনে গেল কীভাবে? ফলে সবমিলিয়ে এই ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে রীতিমতো ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ডিআরএম খড়গপুর আর কে চৌধুরী, এজিএম সৌমিত্র মজুমদার-সহ রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা সেখানে পৌঁছন। ধীরে ধীরে ট্রেন সরানো হয়। দুর্ঘটনার ফলে মিডলাইন এবং ডাউন লাইনে পুরোপুরি ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আপলাইন দিয়ে বন্দে ভারত-সহ কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন পাস করানো হয়। কিন্তু তিনটি লাইনেই লোকাল ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এজিএম সৌমিত্র মজুমদার বলেন, ”ট্রেনটি ডাউন লাইন দিয়েই যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কীভাবে মিডল লাইনে চলে গেল, সেটাই তদন্ত করে দেখা হবে।”