মঠ-মিশনে যেমন, তেমনই বাড়িতে আবার বারোয়ারিতে-- এখন সারা রাজ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে। তবে মনে করা হয়, এর শুরুটা হয়েছিল নদীয়ার শান্তিপুরের ব্রহ্মশাসন এলাকায়। জগদ্ধাত্রী পুজোর এই প্রচলন নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে। কী জনশ্রুতি? শোনা যায়, তৎকালীন বাংলার নবাব মিরজাফরের জামাতা মিরকাশিমের সঙ্গে কৃষ্ণচন্দ্রের মনোমালিন্য হয়। সেই সময়ের হিসেবে এক লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয় রাজাকে। ১৭৬৪ সালে করের টাকা দিতে না পারায় এই জরিমানা। জরিমানার টাকাও দিতে পারেন না রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তখন বিহারের মুঙ্গের জেলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দি করে রাখা হয়। তবে বন্দিদশা একদিন শেষ হয়। বন্দিদশা কাটিয়ে তিনি যখন জলপথে কৃষ্ণনগরের দিকে আসছিলেন তখন দুর্গাপুজো হয়ে গিয়েছে। সেদিন ছিল বিজয়া দশমী। তাই আর সেবারের মতো দুর্গাপুজো করা হল না রাজার। এই নিয়ে খুব মন খারাপ তাঁর।
কিন্তু সেই রাতেই রাজা স্বপ্নাদিষ্ট হন যে, কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দুর্গামন্ত্রে সপ্তমী অষ্টমী নবমী পুজো করলেই দুর্গাপূজার ফল লাভ হবে তাঁর। এ সময়ে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো করতে হবে। শোনা যায়, সেই সময় থেকেই জগদ্ধাত্রী পূজোর প্রচলন।
রাজপরিবারের পুজো থেকে শুরু করে সমস্ত রকম শাস্ত্রীয় কর্ম পরিচালনা করতেন শান্তিপুরের হরিপুর অঞ্চলের ব্রহ্মশাসনের একশো আটঘর ব্রাহ্মণ। যখন রাজা এই স্বপ্ন দেখলেন, তখন তাঁর মনে প্রথম যে চিন্তা উদয় হল, তা হল দেবীমূর্তির রূপ! কী হবে এই দেবীর রূপ-রং-সজ্জা? কৃষ্ণচন্দ্রের গুরুদেব চন্দ্রচূড় তর্কচূড়ামণি বসবাস করতেন ব্রহ্মশাসন এলাকায়। তাঁকেই জগদ্ধাত্রী আসল রূপ এবং পুজোবিধি তৈরি করার বলা হয়। রাজার আদেশ পেয়ে চন্দ্রচূড় তর্কচূড়ামণি কামরাঙা গাছের নীচে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসলেন। ধ্যান শুরু করলেন। সে সময়ে প্রাচীরের গায়ে দেবীমূর্তি ভেসে ওঠে। তিনি যেন তাঁর ভাবচক্ষে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার রূপ দেখেন।
সেই মতোই মূর্তি তৈরি হয়। পুজোও হয়। এভাবেই ব্রহ্মশাসনে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। এর পর আস্তে আস্তে রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই এই পূজার প্রচলন হয়। তবে অন্যান্য জায়গায় যেখানে চারদিনের পুজো হয়, এখানে সেস্থলে শুধু নবমী তিথিতেই পুজো হয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)